পল্লী জাদুঘর
যেন ইতিহাসের দিকে ফিরে যাওয়ার ট্রেন

এককালে মানুষের নিত্যব্যবহার্য ছিল। এখন হারিয়ে গেছে। বাপদাদাদের ব্যবহৃত এমন জিনিসপত্র নিয়ে রংপুরের মিঠাপুকুরে গড়ে উঠেছে পল্লী জাদুঘর। সম্প্রতি তোলা -সমকাল
স্বপন চৌধুরী, রংপুর
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫ | ০১:০৯ | আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ | ১০:১২
ঢেঁকিছাঁটা চালের কথা শুনলেও ধান থেকে চাল তৈরির একসময়ের প্রধান যন্ত্র ‘ঢেঁকি’ চোখে দেখেনি বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই। কিংবা গ্রামোফোন বা কলের গান শোনা এখন শুধুই ইতিহাস। তেমনই হ্যাজাক বাতি, পানের বাটা, ডুগডুগি, তালপাতার পাখা, কুপির মতো গ্রামীণ জীবনের একসময়কার এসব অতি জরুরি অনুষঙ্গ এখন হারাতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে এসব জিনিসকে পরিচয় করিয়ে দিতে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার নিভৃত পল্লি এনায়েতপুরের ফকিরবাড়িতে গড়ে উঠেছে ‘পল্লী জাদুঘর’। রেলগাড়ির আদলে তৈরি এ সংগ্রহশালা যেন আমাদের গ্রামীণ অতীতে ফিরে যাওয়ার বিশেষ ট্রেন। বিশেষ এই জাদুঘরের উদ্যোক্তা ইতিহাস-ঐতিহ্যের শিকড় না ভোলা মানুষ কবি আদিল ফকির।
বিশেষ এই জাদুঘরে রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়া ষাট থেকে নব্বইয়ের দশকের সময়কালে মানুষের ব্যবহৃত গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা জিনিস। এখানে যেমন আছে ঢেঁকি, মাটির চুলা, হ্যাজাক বাতি, হারিকেন, তালপাতার পাখা, একতারা, সিন্দুক, কলের গান, ডুগডুগি, পানের বাটা, কুপি, গরুর গাড়ি, জাঁতা, হুক্কার মতো জিনিস। তেমনি আছে রেডিও, ভিসিআরের মতো অন্তত ২০০ রকমের বিলুপ্তপ্রায় জিনিসপত্র। এ ছাড়া সংগ্রহে রয়েছে কয়েক দশকের প্রচলিত মুদ্রা ও ডাকটিকিট।
কয়েক একর জমিতে গড়ে ওঠা এই পল্লী জাদুঘর ঘিরে রয়েছে ফকিরবাড়ির পাঠশালা, উন্মুক্ত পাঠাগার, সান বাঁধানো পুকুরসহ নানা জাতের বৃক্ষের সমাহার। ভবিষ্যতে একে আরও বড় পরিসরে সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানান উদ্যোক্তা কবি আদিল ফকির।
আদিল ফকির জানান, জাদুঘরটি এখনও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি। তবে আগেই দেশের স্বনামধন্য অনেক লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদসহ নানা পেশার মানুষ এই জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন।
শিশুসাহিত্যিক ও গীতিকার এস এম খলিল বাবু বলেন, এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ফকিরবাড়ির এই জাদুঘর পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম বাপদাদার আমলের জীবনযাপন ও তাদের ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র সম্পর্কে জানার পাশাপাশি দেখতেও পাবে।
আদিল ফকির বলেন, ২০০৪ সাল থেকে স্বপ্ন ছিল এমন কিছু একটা করার। সেই স্বপ্ন থেকেই জন্মভিটার কথা মাথায় রেখে এই পল্লী জাদুঘর করেছি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের শুরুতেই ঢাকা থেকে কলের গান পেয়েছি। এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা ফোন করে তাঁর কিংবা পরিবারের প্রয়াত কারও ব্যবহৃত ষাট-সত্তর দশকের যত্ন করে রাখা জিনিসটি পাঠাচ্ছেন আমাদের ঠিকানায়। সত্যি বলতে, এই উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া মিলছে।
- বিষয় :
- জাদুঘর