খুলনায় আন্দোলন: নেপথ্যে পুলিশ কমিশনার-বিএনপি দূরত্ব

খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবিতে শনিবার বিকেলে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। একই দাবিতে কেএমপি সদরদপ্তরের সামনেও বিক্ষোভ হয়েছে -সমকাল
খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫ | ০১:১০ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫ | ১০:৫০
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের পদত্যাগ দাবিতে ফের বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় কেএমপির সদরদপ্তরের সামনে খানজাহান আলী সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।
সুকান্তকে দিয়ে আন্দোলন শুরু
গত মঙ্গলবার পুলিশের এসআই সুকান্ত দাশকে মারধর করে খানজাহান আলী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয়রা। সুকান্তের বিরুদ্ধে মামলা থাকা সত্ত্বেও রাতে তাঁকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এর প্রতিবাদে গত বুধবার আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ এবং কেএমপি সদরদপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুকান্তকে গ্রেপ্তার করা না হলে কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগের দাবি জানান। বুধবার ভোরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শুরুতে আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সুকান্তকে গ্রেপ্তারের পর তাদের উপস্থিতি কমে যায়। বৃহস্পতিবার ‘খুলনার সাধারণ ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে কেএমপির সামনে মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। গতকালও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। ‘খুলনার সাধারণ ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে কর্মসূচি চললেও আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা।
আন্দোলনে অংশ নেন কারা
গতকাল কেএমপি সদরদপ্তরের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন সদর থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাকিল আহমেদ, সিটি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান, কমার্স কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান আরিফ, সোনাডাঙ্গা থানার আহ্বায়ক মীম হাসান মারজান, বিএল কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম সাজিদ, সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈম হাসান হাসিব, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব মঞ্জুর শাহীন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এস এম কিবরিয়াসহ তাদের নেতাকর্মীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর সদস্য সচিব জহুরুল হক তানভীর কয়েকজন সমর্থকসহ আন্দোলনে অংশ নেন।
সদর থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘ছাত্র-জনতাকে নিপীড়ন ও এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, পুলিশ কমিশনার ফ্যাসিস্টের দোসর।’
বিএল কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম সাজিদ বলেন, বিএল কলেজের শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী খুলনায় এসে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর সদস্য সচিব জহুরুল তানভীর বলেন, বৈষম্যবিরোধী নয়, সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ আন্দোলন। সেখানে সব মতের ছাত্ররা যোগ দিয়েছেন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও নগর কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই আন্দোলনের অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে।
নেপথ্যে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে খুলনায় একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে পুলিশ কমিশনারের ওপর অনেকের ক্ষোভ ছিল। এর মধ্যে গত ১৬ জুন রাতে বিদেশি পিস্তল, ইয়াবাসহ সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক রাজু আহমেদ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জুনায়েদ হোসেন মুন্না, শরণখোলা থানা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব শামীম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। ২০ জুন রাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি, ইয়াবাসহ ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি সালাউদ্দিন মোল্লা বুলবুল এবং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক আহ্বায়ককে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে কুয়েটে আন্দোলনরত ছাত্রদের মারধরের অভিযোগে ছাত্রদল ও যুবদলের দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করে বিএনপি।
এসব ঘটনা নিয়ে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের দূরত্ব চলছিল। এর মধ্যে সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন বলেন, পুলিশ কমিশনার যোগ দেওয়ার পর প্রতি মাসে খুলনায় একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারেননি।
কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, তালিকাভুক্ত ১২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর ৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রতিদিন অভিযানে অবৈধ অস্ত্র, মাদক উদ্ধার করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এসব অনেকের পছন্দ হচ্ছে না। তারা ছাত্রদের একাংশকে ভুল বুঝিয়েছেন।
প্রেস সচিবকে ঘটনা অবহিত
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল বিকেলে খুলনা প্রেস ক্লাব পরিদর্শন করতে যান। রাতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ‘আমাদের দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রেস সচিব। পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করা হয়েছে।’
- বিষয় :
- পদত্যাগের দাবি