ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

আবু সাঈদের কবর জিয়ারতে শুরু এনসিপির পদযাত্রা

জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা বরদাশত করা হবে না

জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা বরদাশত করা হবে না

রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে মঙ্গলবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের পর ‘ দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা -সমকাল

 রংপুর অফিস

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫ | ০১:২১ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ | ০৮:২১

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী এ কর্মসূচি শুরু হয়।

এর পর পদযাত্রা গাইবান্ধা শহর ও সাদুল্লাপুরে একাধিক পথসভা করে। সেখান থেকে রংপুরে এসে আরও কয়েক স্থানের পর সন্ধ্যায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে পথসভা করে।

কর্মসূচিতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম হুঁশিয়ারি দেন, জুলাই সনদ নিয়ে কোনো টালবাহানা তারা বরদাশত করবেন না। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সরকার বা অন্য কেউ যদি মনে করেন, লাখো মানুষ যারা রাজপথে নেমেছিলেন, তারা ঘরে ফিরে গেছেন, তাহলে ভুল ভাবছেন। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ আদায় করেই ঘরে ফিরব। আবু সাঈদরা যে কারণে শহীদ হয়েছেন, পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা সেই আকাঙ্ক্ষা বাংলার প্রতি প্রান্তরে মানুষের কাছে তুলে ধরব।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হয়নি। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে সংস্কার সম্পূর্ণরূপে দেখতে পাইনি। এসব নিয়ে হতাশা রয়েছে। অনেকে মনে করেন, আমাদের আন্দোলন ছিল শুধুই স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী সরকার পতনে। কিন্তু না, সেটি শুধু সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না। সেটি ছিল নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। একটি দল পরিবর্তন বা ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য গণঅভ্যুত্থান ঘটেনি। গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য।

তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষ আবু সাঈদ, ওয়াসীম, মুগ্ধসহ সব শহীদ এবং আহত যোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে অবশ্যই বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দিকে যেতে হবে।

দেশব্যাপী পদযাত্রা শেষে ৩ আগস্ট ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেন আহ্বায়ক। তিনি বলেন, ঢাকার সমাবেশ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আদায় করতে প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামতে হবে।

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন। এর পর পদযাত্রা গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের দিকে রওনা হয়।

সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, দুপুর ২টার দিকে সাদুল্লাপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে পৌঁছায় পদযাত্রা। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা ফিতা কেটে দলের সাদুল্লাপুর উপজেলা কার্যালয় উদ্বোধন করেন। সেখানে পথসভায় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এনসিপি জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি নতুন সংবিধান সংস্কারে কাজ করবে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, সাদুল্লাপুর থেকে পদযাত্রা বেলা ৩টার দিকে গাইবান্ধা পৌর শহীদ মিনার চত্বরে পৌঁছে পথসভা করে। এ সময় নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেননি, গণঅভ্যুত্থান করেননি। নতুন বাংলাদেশে চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখলদারিত্বের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার যে ডাক দিয়েছি, সেটি গড়েই আমরা ঘরে ফিরে যাব।

গাইবান্ধা থেকে ফিরে জুলাই পদযাত্রা রংপুরের লালবাগ, শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানির মোড়, টাউন হল, মেডিকেল মোড়, চেকপোস্ট ও সর্বশেষ শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে পথসভা করে। প্রথম দিনের এসব কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ।

আরও পড়ুন

×