ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

প্রকল্পের ৮১ বিল গায়েব দুই কর্মচারী গ্রেপ্তার

প্রকল্পের ৮১ বিল গায়েব দুই কর্মচারী গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি

শিবপুর (নরসিংদী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫ | ০৬:১৫

জালিয়াতি করে শিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের টিআর-কাবিখা প্রকল্পের ৮১টি বিলের ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বাড়ি থেকে ৫২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার থানায় মামলা করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।

গ্রেপ্তার দু’জন হলেন– শিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের (পিআইও) কার্যসহকারী আরিফুল ইসলাম তুহিন ও পিয়ন আশিক ভূঁইয়া।
আরিফুল ইসলাম তুহিন শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হোসেন আলীর ছেলে। তারা সপরিবারে উপজেলা পরিষদের ভেতরে সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি মনোহরদী উপজেলার চন্দনবাড়ি এলাকায়। আশিক ভূঁইয়া শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, পিআইও অফিসে প্রথমে পিয়নের কাজ করতেন তুহিন। তাঁর বাবা এই উপজেলায় চাকরি করার সুবাদে ২০১৭ সালে পিআইও অফিসের কার্যসহকারী (প্রকল্প) পদে যোগদান করেন। তখন থেকেই পিআইও অফিসের কর্তৃত্ব চলে যায় তাঁর হাতে। অফিসের সরকারি প্রকল্পের সব বিল-ভাউচার তুহিন তৈরি করেন এবং টাকা উত্তোলন করেন। প্রকল্পের সভাপতি-সদস্য সচিবদের তাঁর কাছ থেকেই টাকা নিতে হয়। 

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে টিআর-কাবিখার ৪৩০টি বিল পাস করে পিআইও অফিস। এসব বিল উত্তোলন করে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু হিসাবরক্ষণ দপ্তর থেকে জানানো হয়, ৮১টি বিলের ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ২৯০ টাকা আগেই উত্তোলন করা হয়েছে। পরে সোনালী ব্যাংকের শিবপুর শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট বিলের কপি ও ব্যাংকের পে-স্লিপ তলব করে একাধিক চিঠি পাঠান পিআইও জাহাঙ্গীর হোসেন। কিন্তু কোনো জবাব না পেয়ে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার দায়িত্ব পায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই। তারা তদন্ত করে দেখতে পায়– অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে আরিফুল ইসলাম তুহিন ও আশিক ভূঁইয়া জড়িত। 

এনএসআইয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস ও সোনালী ব্যাংক শিবপুর শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে দুই কর্মচারী টিআর-কাবিখার ৮১টি বিলের ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এরপর গত মঙ্গলবার রাতে পিআইও অফিসের কর্মচারী তুহিন ও আশিককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। স্বীকারোক্তি মোতাবেক তুহিনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৫২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুলকারনাইন বিল্লাহ জানান, পিআইও অফিস বিল দাখিল করেছে। তারা যাচাই করে বিল পাস করেছেন। তাদের দপ্তরে কোনো অনিয়ম হয়নি।

শিবপুর সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, ব্যাংকে কোনো অনিয়ম হয়নি। তাদের কাছে পাঠানো বিল যাচাই করে সঠিকতা পেয়ে পিআইও অফিসকে টাকা দেওয়া হয়েছে। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ৪৩০টি বিল ট্রেজারি অফিসে দাখিল করা হলে ৮১টি বিল আগেই উত্তোলনের কথা বলা হয়। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দেন তিনি। পরে পুলিশ ও এনএসআই তদন্ত করে তাঁর দপ্তরের কার্যসহকারী তুহিন ও পিয়ন আশিককে ৫২ লাখ টাকাসহ আটক করে।

আরও পড়ুন

×