টেকনাফের পাহাড়ে অর্ধলাখ মানুষের জীবন ঝুঁকিতে

ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে সরে যেতে আহ্বান জানাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। শনিবার টেকনাফ পৌরসভার পুরান পল্লানপাড়ার সমকাল
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ | ০০:৩৩
তিন-চার দিন ধরে টানা বর্ষণ চলছে কক্সবাজারের টেকনাফে। এতে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কা। প্রাণহানি এড়াতে গতকাল শনিবার পাহাড়ি বসতি থেকে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং শুরু করেছে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা। এ ছাড়াও ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে হ্নীলা, সদর ইউনিয়ন ও শাহপরীর দ্বীপের হাজারখানেক ঘরবাড়ি।
টেকনাফ পুরান পল্লানপাড়ার বাসিন্দা আমির হোসেনের পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১২ জন। ভারী বর্ষণে শনিবার সকাল থেকেই তারা পানিবন্দি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি। আমির বলেন, ‘বেশি ঝড়ের লাল্যাই গরত ঘুম যায় ন পারির। বিইন্না লটি কিছু হাইতো ন পারি। কিও হবর লইত নো আইয়ে। আঁর ঘরস একশ বাড়ি পানির নিছে ডুবি গিয়েও। বেশি হষ্ট অই পুয়াইন লই।’ প্রতিবছর বর্ষা হলেই তাদের এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় বলেও জানান আমির।
টেকনাফ দক্ষিণ বন বিভাগ ও উপজেলার প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি পাহাড় ও ১১টি টিলায় বসতি আছে। বন বিভাগের ৩৯ হাজার হেক্টর বনভূমিতে সব মিলিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে অর্ধলাখ মানুষ। তাদের মধ্যে আছেন মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকরাও (রোহিঙ্গা)। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে টেকনাফ উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন ফকিরা মোরা, ধুমপেরাং ঘোনা, গিলাতলি, বৈদ্যরঘোনা, নাজিরঘোনা, শিয়াইল্যার ঘোনা, উরমের ছড়া, নতুন পল্লানপাড়া, পুরান পল্লানপাড়া, বরবইতলী, নাইট্যংপাড়া, ব্যাটালিয়ন-সংলগ্ন মাঠপাড়া, জাহালিয়াপাড়া, রোজার ঘোনা, রঙ্গিখালী, আকবরপাড়া, সিকদারপাড়া, মরিচ্যাগুনা, উলুচামারী, লেচুয়া প্রাং, পানখালী, উত্তর সিকদারপাড়া, হলবনিয়া, আছারবনিয়া, মিনাবাজার ও শামলাপুর। এসব এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন মানুষ।
নাইট্যংপাড়ার বাসিন্দা দিল আহমেদ বলেন, এখান থেকে নেমে কোথায় যাবেন, তা জানেন না। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে পাহাড় ধসে পড়তে পারে। তাই পরিবারের সবাই খুব ভয়ে আছেন।
এদিকে, বৃষ্টির পানি জমে শাহপরীর দ্বীপের মাঝারপাড়া, হাজিরপাড়া ও দক্ষিণপাড়ার দেড় শতাধিক বাড়িঘর ডুবে গেছে। সদর ও হ্নীলা ইউনিয়নের হাজারো বাড়িঘরে উঠেছে পানি। শাহপরীর দ্বীপের মাঝারপাড়ার বাসিন্দা আয়েশা খাতুন বলেন, টানা বৃষ্টিতে তারা রাত থেকে ঘুমাতে পারেননি। পানিবন্দি হয়ে ঘরে আটকা পড়েছেন। রাত থেকে রান্না করারও সুযোগ হয়নি। ফলে সন্তান ও নিজেদের খাবার নিয়ে খুব কষ্টে আছেন।
মহেশখালিয়াপাড়ার বাসিন্দা মো. ইসমাইল পেশায় টমটম চালক। তিনি জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টিতে তাঁর এলাকার অনেক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। উপজেলার বেশির ভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। যে কারণে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে আরও ঘরবাড়ি ডুবে যাবে। তিনি ছোট সন্তানদের কোথায় নিয়ে রাখবেন– এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
পুরান পল্লানপাড়ায় শনিবার পাওয়া যায় সিপিপির টিম লিডার কুলসুমা আক্তারকে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় দেড় শতাধিক মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছেন। আমরা তাদের নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে বারবার বলছি।’
টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, তাঁর ইউনিয়নের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টি কমলে পানিও কমে। যাদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। তারা পানিবন্দি মানুষের খোঁজ রাখছেন।
টেকনাফ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ আহমেদ বলেন, টানা বর্ষণের ফলে তারা পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন। এ কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং চলছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন এ বিষয়ে সমকালকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যদের সঙ্গে আমরা
ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করছি। কারণ টানা বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের ভয় আছে। ইতোমধ্য কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।’ তারা পানিবন্দি লোকজনের খোঁজখবরও রাখছেন।
- বিষয় :
- ঝুঁকিপূর্ণ ভবন