ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ফসলের সঙ্গে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

ফসলের সঙ্গে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

ফাইল ছবি

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ | ০০:৩৬

হবিগঞ্জে লাইসেন্স ছাড়াই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। এগুলোর চারপাশে সবুজে ঘেরা ফসলি জমি, নদীর পার ও স্কুল-কলেজ। ইটভাটার ধোঁয়ায় ফসল, ফলের বাগান, গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশও। 
অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই এসব ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। যেগুলোর বৈধ কাগজপত্র রয়েছে, সেগুলোও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। যে যার মতো ভাটা পরিচালনা করছে। ফসলি জমি, নদীর পার ও স্কুল-কলেজঘেঁষে এসব ভাটা গড়ে ওঠায় হুমকিতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। 
ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় বাড়ছে শ্বাসকষ্টসহ রোগবালাই। ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ভাটায় নেওয়ায় জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। ভাটার বিষাক্ত বর্জে ব্যাঘাত ঘটছে কৃষিকাজে। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে এমন কর্মকাণ্ড চললেও প্রশাসন নির্বিকার। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলাজুড়ে ইটভাটা রয়েছে ১১৯টি। এর মধ্যে ২৪টির পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। অন্যান্য কাগজপত্রেও রয়েছে ত্রুটি। কোনো কোনো ভাটার বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন হয় না। জেলার বাহুবল, চুনারুঘাট ও নবীগঞ্জ উপজেলায়ই শুধু রয়েছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা।  ভাটার ধোঁয়ায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না। 
হবিগঞ্জ মিরপুর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই অন্তত ২০টি ইটভাটা। দূর থেকে তাকালেই দেখা যায় কুণ্ডলী পাকানো কালো ধোঁয়া। গাছের সবুজ পাতা বিবর্ণ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার কারণে আশপাশের এলাকায় গাছে কমেছে ফলের পরিমাণ, প্রভাব পড়েছে কৃষিজমিতেও। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সব ইটভাটায় পরিবেশসম্মত জিগজাগ চুল্লি বসানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও ভাটা মালিকরা মানছেন না। 
স্থানীয় বাসিন্দা কাজল মিয়া বলেন, ইটভাটার ধোঁয়া কৃষিজমি ও ফসলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ভাটার পার্শ্ববর্তী জমিতে টমেটো ও ফুলকপির ফুল এলেও সেগুলো মরে যায়। তিনি বলেন, ভাটায় শুধু ইট পুড়ছে না, আমাদের কপালও পুড়ে যাচ্ছে। 
ফরিদ মিয়া বলেন, ইটভাটার মাটি আনা-নেওয়ায় সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। বৃষ্টির দিন এলে সড়ক দিয়ে হাঁটাচলা করাই মুশকিল হয়ে পড়ে। 
কলেজছাত্র আজিজুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ভাটা আমাদের পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। হুমকিতে পড়েছে ফসলসহ মানুষের জনজীবন। এসব ভাটার বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ইটভাটাগুলো পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষিজমি থেকে যে পরিমাণ টপ সয়েল নেওয়া হচ্ছে ইটভাটার জন্য, এতে কৃষি ব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে পরিবেশ আইনের শতভাগ প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান বলেন, জমির টপ সয়েল কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় জরিমানা ও মামলা দায়ের করা হচ্ছে। চারটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জনবসতির পাশে কোনো ইটভাটার লাইসেন্স দেওয়া হবে না।

আরও পড়ুন

×