চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী এবার চার গুণ

ফাইল ছবি
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ | ০১:০৮ | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫ | ০৭:১৮
চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তদের অনেকে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। বাসায় থেকে কেউ কেউ এক থেকে দুই সপ্তাহ ধরে নিচ্ছেন চিকিৎসা। জুলাই মাসের শুরু থেকেই ভয়ংকর হচ্ছে পরিস্থিতি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত বছরের জুন মাসের তুলনায় এবার জুনে আক্রান্ত চার গুণ বেশি। আক্রান্তের হার বাড়লেও মশা মারতে যেন গরজ নেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। তারা এখনও রুটিন কাজে ব্যস্ত।
বাসিন্দাদের অভিযোগ মশার অত্যাচার বেড়েছে বহুগুণ, তবে ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না কাউকে। এদিকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে দিনের পর দিন বিভিন্ন স্থানে জমে থাকছে পানি। এতে বাড়ছে মশার প্রজনন। এমন পরিস্থিতিতে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকায় বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ছয় মাসের মধ্যে জুনে সর্বোচ্চ ১৭৬ রোগী শনাক্ত হয়েছে। জানুয়ারিতে ৭০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৮, মার্চে ২২, এপ্রিলে ৩৩ এবং মে মাসে ১১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এবার জুনে আক্রান্ত গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৪ সালের জুন মাসে আক্রান্ত হয়েছিল ৪১ জন, ২০২২ সালে ছিল ১৯ জন। চলতি জুলাই মাসের প্রথম পাঁচ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে অর্ধশত।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিচালিত এক জরিপে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে নগরের ছয়টি এলাকাকে ‘লাল’, পাঁচটিকে ‘হলুদ’, সাতটিকে ‘নীল’ এবং চারটি এলাকা ‘সবুজ’ তালিকাভুক্ত করা হয়। তবে এসব এলাকায়ও মশক নিধন কার্যক্রম দৃশ্যমান না হওয়ার অভিযোগ বাসিন্দাদের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা কঠিন হতে পারে। যে জায়গাগুলো ডেঙ্গুর হটস্পট, সেখানে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
নগরীর চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা ডেঙ্গু আক্রান্ত মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘কয়েকদিন পর পর বাসার চারপাশ নিজেরা পরিষ্কার করি। মশারি ছাড়া ঘুমাই না। এর পরও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি। দিন-রাতে সমানতালে বেড়েছে মশার অত্যাচার। কিন্তু গত তিন মাসেও মশার ওষুধ ছিটাতে দেখিনি। ঘরে আছে শিশু সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা-মা। কখন যে কে আক্রান্ত হয়, সেই দুশ্চিন্তায় কাটছে বেশির ভাগ সময়।’
বাকলিয়া এলাকার গৃহিণী শিমলা আক্তার বলেন, ‘পরিচিত বেশ কয়েকজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। বাসায় রয়েছে দুই শিশু সন্তান। তাই নিজেরাও উদ্বিগ্ন। এলাকার চারপাশে ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। কিছু স্থানে নিয়মিত জমে থাকে পানি। এতে ভন ভন করে মশা। এসব দেখার যেন কেউ নেই।’ কর্নেল হাট এলাকার বাসিন্দা মো. আলমগীর বলেন, ‘গণমাধ্যমে দেখি মেয়র অনেককে নিয়ে বিশেষ ক্রাশ অভিযান উদ্বোধন করছেন। কিন্তু বাস্তবে তো মশা মারতে এত তোড়জোড় দেখি না।’
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘একই ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে মশার মধ্যে রেজিস্টেন্স তৈরি হয়। এজন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাভিত্তিক নতুন মশা নিধন সমাধান বায়োলজিক্যাল লার্ভিসাইড বিটিআই পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছি। শুধু সিটি করপোরেশনের ওপর দায় চাপিয়ে না দিয়ে প্রত্যেক নাগরিককে নিজ নিজ জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে। ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো কমিশনার না থাকা সত্ত্বেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’ সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জুলাইয়ের শুরু থেকে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এজন্য মশা মারার বিকল্প নেই। কারণ সঠিক সময়ে মশা মারতে না পারলে আক্রান্তের হার বেড়ে যাবে। কিছুদিন ধরে রোগী বাড়ছে হাসপাতালে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে রোগীর চাপ বাড়ছে। প্রতিদিন আউটডোরেও অনেক রোগী আসছেন। এদের মধ্যে অনেককে ভর্তি করতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে হবে।’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, জমে থাকা স্বচ্ছ পানিই এডিস মশার প্রজননের উপযুক্ত ক্ষেত্র। ডাবের খোসা, প্লাস্টিক বোতল বা পলিথিনে এক মিলিলিটার পানি জমে থাকলেও সেখানে মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় পরিচালিত এক জরিপে ৩৭ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। বাসাবাড়ির আশপাশে এবং বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত প্রায় ৩৬ শতাংশ ছোট-বড় পাত্রে মিলেছে লার্ভার প্রজননকেন্দ্র। নগরের বেশির ভাগ স্থানে
ছোট-বড় পাত্র ও নালায়, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ড্রাম, নারিকেলের খোসাসহ বিভিন্ন অংশে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকছে পানি।
- বিষয় :
- ডেঙ্গু