ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

প্রবাল রক্ষায় সেন্টমার্টিন ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটক নিষিদ্ধ

প্রবাল রক্ষায় সেন্টমার্টিন ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটক নিষিদ্ধ

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২০ | ০৭:১১

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের অংশ ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটক নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। মূলত এখনও ছেঁড়া দ্বীপে কিছু সামুদ্রিক প্রবাল জীবিত আছে। এই প্রবালগুলো সংরক্ষণের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ১২ অক্টোবর এক পরিপত্র জারি করার পর তা বাস্তবায়ন করছে কোস্টগার্ড। এ ছাড়া পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সেন্টমার্টিনে ছয় ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশও দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। নভেম্বর মাস থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের যাতায়াত বাড়বে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরিপত্রটি জারি করা হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোস্টগার্ডকে।

২৯ অক্টোবর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে উল্লেখ করে সেন্টমার্টিনের দায়িত্বরত কোস্টগার্ড কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট আরিফুজ্জামান রনি সমকালকে জানান, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে লিখিত পত্রের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে কোস্টগার্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে।’

নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-পরিচালক নাজমুল হুদা বলেন, ‘তবে কতদিনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা তা নিশ্চিত করতে না পারলেও ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। দ্বীপের পরিবেশের ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা পুনরুদ্ধারে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে সেন্ট মার্টিন রক্ষায় সব ধরনের উদ্যোগ নেব। প্রাথমিকভাবে আমরা কোস্টগার্ডের মাধ্যমে সেখানে এসব কার্যক্রম বন্ধ করব। এ ছাড়া দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় আমরা যেসব কার্যক্রম চালাচ্ছি সেগুলো আরও জোরদার হবে।’

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুয়ায়ী, এখন থেকে সেন্ট মার্টিনের সৈকতে কোনো ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন যেমন মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনচালিত গাড়ি চালানো যাবে না; রাতে সেখানে আলো বা আগুন জ্বালানো যাবে না; রাতের বেলা কোলাহল সৃষ্টি বা উচ্চস্বরে গানবাজনার আয়োজন করা যাবে না; টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতকারী জাহাজে অনুমোদিত ধারণ সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না; অননুমোদিত এবং অনুমোদনের অতিরিক্ত নির্মাণসামগ্রীর সেন্টমার্টিনে যাতায়াত বন্ধ করা হবে; পরিবেশদূষণকারী দ্রব্য যেমন পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করা হবে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংসকারী কার্যক্রমগুলো বন্ধে কোস্টগার্ডকে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, দ্বীপটি পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমের কারণে মারাত্মক ধ্বংসের মুখে রয়েছে। দেশের একমাত্র ওই প্রবাল দ্বীপের জীববৈচিত্র্য এবং বনভূমি মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে। ফলে শুধু ছেঁড়া দ্বীপ না, সেন্টমার্টিনেই পর্যটকদের যাতায়াত আপাতত নিষিদ্ধ করা উচিত।

এমন উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করে কক্সবাজারের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ‘ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটক নিষিদ্ধ অনেক আগেই কথার প্রয়োজন ছিল। দেরীতে হলেও তা হওয়ায় ছেঁড়া দ্বীপের রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। তবে দ্বীপ রক্ষায় কেবল ছেঁড়া দ্বীপ নয়, পুরো সেন্টমার্টিনে কিছুদিন পর্যটক নিষিদ্ধ করা জরুরি।’

এদিকে আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সেন্টমার্টিনে ১০৬ হোটেল-মোটেলসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতে এক সময় দ্বীপ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন

×