ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

হেফাজতের নেতৃত্বে জামায়াত-বিএনপিকে আনার তোড়জোড়!

হেফাজতের নেতৃত্বে জামায়াত-বিএনপিকে আনার তোড়জোড়!

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২০ | ০৭:৩১ | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ | ০৯:৫৮

হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে জামায়াত-বিএনপি সমর্থকদের আনার তোড়জোড় চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী। শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, 'কাউন্সিলের মাধ্যমে আহমদ শফীর হাতে গড়া অরাজনৈতিক কওমী সংগঠনকে পরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবির, বিএনপির হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।'

আহমদ শফীর পরিবারের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে রুহী বলেন, 'তার (আহমদ শফী) হত্যার বিচারের আগে কোনো কাউন্সিল না করার জন্য হেফাজতে ইসলামের সকল দায়িত্বশীলদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।'

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, 'এটা দিনের মতো পরিষ্কার, জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এই কাউন্সিল। তাদের চলাফেরা দেখেই এটা প্রতীয়মান। কিছু সংখ্যক উচ্চাভিলাষী ব্যক্তি রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।‘

মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘আজ যারা কাউন্সিল করছে তাদের কারও কারও ছবি দেখা গেছে তাদের (জামায়াত) সাথে। অনুরোধ করছি, আপনারা মূলধারায় ফিরে আসুন। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ১৫ নভেম্বরের পর সিনিয়রদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।‘

তিনি বলেন, 'আল্লামা আহমদ শফী হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা। যারা উনার মতাদর্শে থাকবে তারাই আসল হেফাজতে ইসলাম।'

মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, 'কাউন্সিলে যিনি সভাপতিত্ব করবেন (মহিবুল্লাহ বাবুনগরী) তিনি আগেই পদত্যাগ করেছেন। এরপর আর হেফাজতে ফিরে আসেননি। তাই এই কাউন্সিল অবৈধ। সাতজন যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে পাঁচজন আমন্ত্রণ পাননি। ৩৫ জন নায়েবে আমিরের মধ্যে ২৩ জন এখনও দাওয়াত পাননি এবং তারা যেন আসতে না পারেন পরিকল্পিতভাবে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।'

হেফাজতে ইসলামের বর্তমানে কোনো শুরা কমিটি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, '২০১৪ সালে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু আহমদ শফী বলেছিলেন শুরা করলে সারাদেশের আলেমদের নিয়ে করতে হবে। হেফাজতে ইসলাম এত বড় দেশব্যাপী সংগঠন যে তাহলে হাজার খানেক সদস্য হবে শুরার। তাই শুরা কমিটি হয়নি।'

মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, 'নিজেরা আমির হওয়ার জন্য এই শুরা কমিটির কথা বলা হচ্ছে। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুসারে আমিরের অবর্তমানে সিনিয়র নায়েবে আমির ভারপ্রাপ্ত হবেন। কেন্দ্রীয় কমিটি ও নির্বাহী কমিটির মতামতের ভিত্তিতে আমির নির্বাচন হবে। কেন্দ্রীয় ও নির্বাহী কমিটির এখন পর্যন্ত কোনো সভা হয়নি। মহাসচিব নিজেই কাউন্সিলের ডাক দিয়েছেন।'

সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা সারওয়ার, আশরাফ উদ্দিন, আতিক মোহাম্মদ, মো. কাসেম, শামসুল হক, ওসমান কাসেমী ও আহমদ শফীর নাতি মাওলানা কায়সার উপস্থিত ছিলেন।

আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও 'হত্যার হুমকি' পেয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানান আহমদ শফীর অনুসারীরা।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে দাবি করে করেন তার ছোট শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন।

তিনি বলেন, 'আল্লামা শাহ আহমদ শফী জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার। স্বাধীনতার পক্ষে থাকায় তার ওপর বহুবার আঘাত এসেছে। তিনি প্রকাশ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য ও বই লেখায় তার প্রতি জামায়াত-শিবিরের ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিনের।‘

ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ফাঁদে পা না দেওয়ায় তখন থেকেই আহমদ শফীকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাতা হয় বলে অভিযোগ তার।

আহমদ শফীর শ্যালক মঈন বলেন, '১৬ সেপ্টেম্বর কিছু ছাত্রকে উসকে দিয়ে মাদ্রাসায় জামায়াত-শিবিরের লেলিয়ে দেওয়া ক্যাডার বাহিনীকে ব্যবহার করে মাদ্রাসাকে অবরুদ্ধ করা হয়। তার ছাত্র ও অত্যন্ত পছন্দের জুনাইদ বাবুনগরী মাদ্রাসায় অবস্থান করে মীর ইদ্রিস, নাছির উদ্দিন মুনীর, মুফতি হারুন ইজাহার, ইনামুল হাসানদের দিয়ে একের পর এক মাদ্রাসার তহবিল লুটতরাজ ও ভাংচুর করে। দুর্বৃত্তরা তার খাস কামরায় প্রবেশ করে ভাংচুর, লুটতরাজ, গালিগালাজ, হুমকি ধমকি ও নির্যাতন চালায়।'

আহমদ শফীকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, 'এতে তিনি (আহমদ শফী) ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় তার অক্সিজেন লাইন বারবার খুলে দেওয়ায় তিনি মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং কোমায় চলে যান। অনেক কষ্ট করে চিকিৎসার জন্য বের করা হলেও রাস্তায় পরিকল্পিতভাবে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখে সময়ক্ষেপণ করে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।'

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে মঈন বলেন, 'আল্লামা শাহ আহমদ শফী আপনাকে মেয়ের মতো মহব্বত করতেন। জামায়াত-শিবিরের যে সকল প্রেতাত্মারা হাটহাজারী মাদ্রাসায় অবস্থান করে তাকে হত্যা করেছে, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে তাদের অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করার জোর দাবি জানাচ্ছি।'

আরও পড়ুন

×