ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে 'পাবনা সুগার মিল', তালিকায় আরও ৫

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে 'পাবনা সুগার মিল', তালিকায় আরও ৫

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২০ | ০৫:৩৩ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ | ০৭:০৬

টানা লোকসানে পড়ায় বন্ধ হতে যাচ্ছে ঈশ্বরদীর 'পাবনা সুগার মিল'। পাবনা সুগার মিল এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরইমধ্যে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হলে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। বন্ধের তালিকায় পাবনা সুগার মিল ছাড়াও কুষ্টিয়া, সেতাবগঞ্জ, রংপুর, শ্যামপুর ও পঞ্চগড়ের ৫টি মিল রয়েছে বলে জানা গেছে। 

পাবনা সুগার মিলে এবছর ৮০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মিল জোনে এ বছর ৫ হাজার ২০০ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এর বিপরীতে কৃষকদের প্রায় ৪ কোটি টাকা ঋণও প্রদান করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। 

বাংলাদেশ আখচাষী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত চাষী আলহাজ্ব শাজাহান আলী বাদশা জানান, ঈশ্বরদীতে প্রায় ৫ হাজার কৃষক প্রতিবছরের মত এবছরও তাদের জমিতে আখচাষ করেছেন। এসব আখ কাটার উপযোগী হয়ে উঠেছে। এই মুহূর্তে যদি মিল বন্ধ ঘোষণা করা হয় তাহলে ওই কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

পাবনা সুগার মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, গত ৫-৬ মাস এই মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়নি।প্রায় সাড়ে ছয়শ' শ্রমিক-কর্মচারী বেতন বাবদ মিলের কাছে ৬ কোটি টাকা পাবে। এ পরিস্থিতিতে মিল বন্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

এদিকে মিল বন্ধ করা রুখতে এবং চিনি শিল্প রক্ষার্থে ৫ দফা দাবি নিয়ে বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন দেশজুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। আগামী শনিবার থেকে মিলগেটে ফটকসভা, বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং চলতি বছরে আখ মাড়াই মওসুমের তারিখ নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন চিনি মিলে বয়লার স্লো ফায়ারিং করতে না দেওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। 

বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মো. মাসুদুর রহমান বলেন, সুগার মিল বন্ধ করা রুখতে গত ১৬ নভেম্বর ফেডারেশনের যৌথ সভায় এ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুদ্দিন সমকালকে বলেন, অফিসিয়ালি কোন চিঠি পাইনি, তবে মৌখিকভাবে শুনেছি মিল বন্ধ হওয়ার কথা। এ বছর এখন পর্যন্ত আখ মাড়াইয়ের নির্দেশনা আসেনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা বলেন, মিল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের। কর্পোরেশন থেকে আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রণালয় সম্মত হলে গেজেট করার পর আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালে মিল বন্ধ করা হবে। 

১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া মৌজার ৬০ একর জমির উপর পাকিস্তান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় 'পাবনা সুগার মিল' প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে আখ মাড়াই মৌসুমে মিলটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। মিলটি ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে বাণিজ্যিকভাবে চিনি উৎপাদন শুরু করে। চালুর পর থেকেই মিলে উৎপাদন ঘাটতি শুরু হয়। গত ২৮ বছরে মিলটি উৎপাদন ঘাটতিতে লোকসান দিয়েছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি।

আরও পড়ুন

×