এসিল্যান্ডের ওপর হামলা
কমলগঞ্জে গ্রেপ্তার আতঙ্কে শতাধিক পরিবার গ্রামছাড়া

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ১০:৪০
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের একটি গ্রামে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) বা এসিল্যান্ডের ওপর হামলার পর ব্যাপক ধরপাকড় চলায় স্থানীয়দের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় নিরীহদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকার ঘরে ঘরে তালা ঝুলছে। ভয়ে শতাধিক পরিবারের সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৬ নভেম্বর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রাজকান্দি গ্রামে হামলার এ ঘটনা ঘটে। হামলার পর করা মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৫৩-৫৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। সেদিনই শতাধিক পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে আটজনকে এবং পরে আরও দু'জনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ রয়েছে, হামলার সঙ্গে সংশ্নিষ্টতা না থাকা নিরীহ লোকদেরও হয়রানি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজকান্দি গ্রামের সরকারি খাসজমিতে 'দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণ' প্রকল্পের আওতায় ২০টি গৃহ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ১৬ নভেম্বর প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা ছিল। তবে তার আগেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সাইনবোর্ড স্থানীয়রা ভেঙে ফেলে। ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলার শিকার হন কমলগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরিন চৌধুরী। তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। সরকারি কাজে বাধা, হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে সেদিনই তিনি বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, মামলার প্রধান আসামি সুন্দর মিয়ার বাড়িসহ ঘটনাস্থলের আশপাশের বাড়িগুলোতে কোনো মানুষ নেই। প্রতিটি ঘরে তালা ঝুলছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোনো কোনো বাড়িতে পুরুষ থাকলেও হঠাৎ গাড়ির শব্দ পেলেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রেপ্তার আতঙ্কে নিরপরাধ অনেক মানুষও বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে স্থানীয়রা জানান।
জানা গেছে, প্রকল্পের ওই স্থানে বসতবাড়ি নির্মাণ, ফলদ-বনজ গাছ রোপণ ও পানের বরজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে শতাধিক পরিবার। কয়েকটি বাড়ি উচ্ছেদ করে গাছ, বাঁশ কেটে প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিলে তাতে বাধা দেয় এলাকাবাসী। এ সময় স্থানীয় কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির হামলার শিকার হন নাসরিন চৌধুরী ও এক নারী পুলিশ সদস্য।
গ্রামের বাসিন্দা সুমি বেগম বলেন, 'আমার ভাই আনকার মিয়া ঘটনার দিন আদমপুর বাজারে রাজমিস্ত্রির কাজ করে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরেন। রাতে পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। এখন আমাদের আয়-রোজগার না থাকায় অভাব অনটনে দিন কাটছে।'
বৃদ্ধা দুর্লভজান বিবি বলেন, আমার ছেলে কলেজছাত্র মিজানুর রহমান ওই ঘটনায় জড়িত ছিল না। তাকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এই ইউনিয়নে অনেক অব্যবহূত খাসজমি রয়েছে। সেসব স্থানে আবাসন প্রকল্প না করে জনবসতি উচ্ছেদ করে বৃক্ষরাজি কেটে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়ার লোকজন হামলা চালিয়েছে। তবে তিনি বলেন, সরকার তার ভূমিতে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এখানে আমার কোনো লোকদের বাধা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে আটক করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় এমন কাউকে পুলিশ আটক করবে না। নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। এসিল্যান্ড নাসরিন চৌধুরী জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে মামলায় প্রকৃত ব্যক্তিদেরই আসামি করা হয়েছে।
- বিষয় :
- মৌলভীবাজার
- হামলা
- এসিল্যান্ড
- গ্রেপ্তার আতঙ্ক