ভয়ংকর পার্লাইট

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড সাগর উপকূলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এলএনজি গ্যাস পরিবহনকারী স্ট্ক্র্যাপ জাহাজের ক্ষতিকারক পার্লাইট পাউডার - সমকাল
এস সেকান্দর হোসাইন, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ১৩:৪৮
পার্লাইট পাউডার। মানবদেহে প্রবেশ করলে নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগসহ ফুসফুস ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে এই পাউডার। কিন্তু এসব বিষয়ে যেন কোনো খেয়ালই নেই তাদের। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সাগর উপকূলে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) বহনকারী স্ট্ক্র্যাপ জাহাজগুলো কাটার পর পার্লাইট পাউডার স্তূপাকারে ফেলে রাখা হচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে। এতে করে আশপাশের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
এছাড়া পরিত্যক্ত মণকে মণ পাউডার ফেলা হচ্ছে খালবিলে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এই পাউডার মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে ক্যান্সারসহ নানা রোগ হতে পারে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই পাউডারে পরিবেশের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে এই পাউডারগুলো গর্ত করে পুঁতে ফেলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইয়ার্ড মালিকদের।
স্থানীয়রা জানান, সীতাকুণ্ডের সাগর উপকূলের ফৌজদারহাট, কদম রসুল, শীতলপুর ও কুমিরা এলাকায় সম্প্রতি চারটি এলএনজি স্ট্ক্র্যাপ পুরোনো জাহাজ আনা হয় কাটার জন্য। এসব জাহাজে বিভিন্ন দেশে এলএনজি গ্যাস পরিবহন করা হতো। গ্যাস পরিবহনে জাহাজের ট্যাঙ্কগুলোর সুরক্ষার জন্য দুই স্তরবিশিষ্ট এক ধরনের প্লাইবোর্ডের প্রতিরোধক থাকে। আর প্লাইবোর্ডের দুই স্তর মধ্যে থাকে এক ধরনের পাউডার। শিপইয়ার্ড মালিকরা এই পাউডারকে পার্লাইট পাউডার বলে থাকেন। এই পাউডারের কারণে ট্যাঙ্কে থাকা গ্যাস সুরক্ষিত থাকে।
এলএনজি জাহাজগুলো যখন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়, তখন তা বেচে দেওয়া হয়। সীতাকুণ্ড সাগর উপকূলে এই জাহাজগুলো কাটার জন্য আনা হয়। জাহাজটি স্ট্ক্র্যাপ (অনুপযোগী) হিসেবে কেটে মালিকরা তা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ওই ট্যাঙ্কের অংশ বিশেষ কিনে নিয়ে উন্মুক্ত স্থানে পাউডারগুলো ফেলে দেন। এরপর প্লাইবোর্ড ও কাঠগুলো ফার্নিচারের দোকানে বেচে দেন।
গত সোমবার সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট বাংলাবাজার টিঅ্যান্ডটি কলোনি এলাকায় দেখা যায়, বিশাল এলাকায় খোলা জায়গায় পাউডারগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এলাকার জাহেদুল ইসলাম ও শাহাদাত পার্শ্ববর্তী একটি ইয়ার্ড থেকে প্লাইবোর্ডের বক্স (ট্যাঙ্ক) কিনেছেন। সেগুলো পৃথক করার জন্য সাত-আটজন শ্রমিক মুখে গামছা পেঁচিয়ে ও চোখে সুরক্ষা গ্লাস লাগিয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে থাকা পার্লাইট পাউডারগুলো ফেলা হচ্ছে খাসজমিতে। অথচ নিময় রয়েছে, এই পাউডার গর্ত করে পুঁতে ফেলার। পাউডারের কারণে আশপাশের বসতির মানুষকে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। একই দৃশ্য সোনাইছড়ির মদনহাট সংলগ্ন খালের পাড়েও। সেখানে পাউডার ফেলা হচ্ছে খালে। তবে জাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্নিষ্টদের জানিয়েই এ কাজ করছেন।
জাহাজ ভাঙা শিল্পের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, জাহাজগুলো যারা কাটছে, তাদের পার্লাইট পাউডার মাটিতে পুঁতে ফেলতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা সেটি করছেন না।
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ জমির উদ্দিন বলেন, এই পাউডার উন্মুক্ত স্থানে ফেলার কারণে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, এই পাউডার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শরীরে প্রবেশ করলে ক্যান্সারসহ নানা রোগ হতে পারে।
পার্লাইট হলো আগ্নেয়গিরির এক ধরনের পাথর। এটি সাদা রঙের এবং ওজনেও খুব হালকা।
চট্টগ্রামের মহসিন কলেজের রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. ইদ্রিস আলী বলেন, পার্লাইট পাউডার ফসলের জন্য মাটির প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন- আয়রন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি শোষণ করে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না করে যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়, তাহলে বিভিন্নভাবে তা মানুষের খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করবে এবং বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদপ্তরের সংস্থা অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ওএসএইচএ) পার্লাইট পাউডারকে উপদ্রব ধূলি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
এছাড়া পরিত্যক্ত মণকে মণ পাউডার ফেলা হচ্ছে খালবিলে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এই পাউডার মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে ক্যান্সারসহ নানা রোগ হতে পারে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই পাউডারে পরিবেশের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে এই পাউডারগুলো গর্ত করে পুঁতে ফেলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইয়ার্ড মালিকদের।
স্থানীয়রা জানান, সীতাকুণ্ডের সাগর উপকূলের ফৌজদারহাট, কদম রসুল, শীতলপুর ও কুমিরা এলাকায় সম্প্রতি চারটি এলএনজি স্ট্ক্র্যাপ পুরোনো জাহাজ আনা হয় কাটার জন্য। এসব জাহাজে বিভিন্ন দেশে এলএনজি গ্যাস পরিবহন করা হতো। গ্যাস পরিবহনে জাহাজের ট্যাঙ্কগুলোর সুরক্ষার জন্য দুই স্তরবিশিষ্ট এক ধরনের প্লাইবোর্ডের প্রতিরোধক থাকে। আর প্লাইবোর্ডের দুই স্তর মধ্যে থাকে এক ধরনের পাউডার। শিপইয়ার্ড মালিকরা এই পাউডারকে পার্লাইট পাউডার বলে থাকেন। এই পাউডারের কারণে ট্যাঙ্কে থাকা গ্যাস সুরক্ষিত থাকে।
এলএনজি জাহাজগুলো যখন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়, তখন তা বেচে দেওয়া হয়। সীতাকুণ্ড সাগর উপকূলে এই জাহাজগুলো কাটার জন্য আনা হয়। জাহাজটি স্ট্ক্র্যাপ (অনুপযোগী) হিসেবে কেটে মালিকরা তা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ওই ট্যাঙ্কের অংশ বিশেষ কিনে নিয়ে উন্মুক্ত স্থানে পাউডারগুলো ফেলে দেন। এরপর প্লাইবোর্ড ও কাঠগুলো ফার্নিচারের দোকানে বেচে দেন।
গত সোমবার সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট বাংলাবাজার টিঅ্যান্ডটি কলোনি এলাকায় দেখা যায়, বিশাল এলাকায় খোলা জায়গায় পাউডারগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এলাকার জাহেদুল ইসলাম ও শাহাদাত পার্শ্ববর্তী একটি ইয়ার্ড থেকে প্লাইবোর্ডের বক্স (ট্যাঙ্ক) কিনেছেন। সেগুলো পৃথক করার জন্য সাত-আটজন শ্রমিক মুখে গামছা পেঁচিয়ে ও চোখে সুরক্ষা গ্লাস লাগিয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে থাকা পার্লাইট পাউডারগুলো ফেলা হচ্ছে খাসজমিতে। অথচ নিময় রয়েছে, এই পাউডার গর্ত করে পুঁতে ফেলার। পাউডারের কারণে আশপাশের বসতির মানুষকে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। একই দৃশ্য সোনাইছড়ির মদনহাট সংলগ্ন খালের পাড়েও। সেখানে পাউডার ফেলা হচ্ছে খালে। তবে জাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্নিষ্টদের জানিয়েই এ কাজ করছেন।
জাহাজ ভাঙা শিল্পের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, জাহাজগুলো যারা কাটছে, তাদের পার্লাইট পাউডার মাটিতে পুঁতে ফেলতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা সেটি করছেন না।
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ জমির উদ্দিন বলেন, এই পাউডার উন্মুক্ত স্থানে ফেলার কারণে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, এই পাউডার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শরীরে প্রবেশ করলে ক্যান্সারসহ নানা রোগ হতে পারে।
পার্লাইট হলো আগ্নেয়গিরির এক ধরনের পাথর। এটি সাদা রঙের এবং ওজনেও খুব হালকা।
চট্টগ্রামের মহসিন কলেজের রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. ইদ্রিস আলী বলেন, পার্লাইট পাউডার ফসলের জন্য মাটির প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন- আয়রন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি শোষণ করে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না করে যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়, তাহলে বিভিন্নভাবে তা মানুষের খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করবে এবং বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদপ্তরের সংস্থা অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ওএসএইচএ) পার্লাইট পাউডারকে উপদ্রব ধূলি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
- বিষয় :
- ভয়ংকর পার্লাইট