হঠাৎই ১০ ফুট দেবে গেল ব্যস্ত সড়কটি

সড়কের দেবে যাওয়া অংশ দেখতে আশপাশের মানুষের ভিড় -সমকাল
ইজাজ আহমেদ মিলন, গাজীপুর ও মো. আ.কাইয়ুম, কাপাসিয়া
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৫:৫১ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৫:৫২
শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ঘেঁষা সড়কের মাঝামাঝি জায়গায় বড় একটা ফাটল দেখা দিয়ে ছিল বৃহস্পতিবার রাতের প্রথম ভাগেই। আর রাত পার হওয়ার আগেই ২০ ফুট প্রস্থের ওই সড়কের প্রায় আড়াই’শ ফুট এলাকা ১০ ফুট দেবে গেছে।
শুক্রবার ভোরে হঠাৎ করেই শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ঘেঁষা শ্রীপুর-কাপাসিয়া আঞ্চলিক সড়কের দস্যু নারায়ণপুর দাসপাড়া এলাকার পোস্ট অফিসের কাছের অংশ দেবে যায়। একই সঙ্গে দেবে গেছে সড়কের উত্তরপাশে নদীর তীরবর্তী প্রায় ৩ হাজার বর্গফুট এলাকাও।
শীতলক্ষ্যা নদীর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে চতুর্থবারের মতো সড়ক ও সড়কের পাশের জমি সমতল থেকে ১০ ফুট গভীরে দেবে গেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বন্ধ রয়েছে কাপাসিয়া ও শ্রীপুরের সড়ক যোগাযোগ।
স্থানীয়রা জানান, সড়ক ও সড়কের পাশের জমি সমতল থেকে ১০-১২ ফুট গভীরে দেবে গেছে। ২০ ফুট প্রস্থের সড়কসহ দেবে যাওয়া জমির দৈর্ঘ্য ২৫০ ফুট। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একই স্থানে সড়ক দেবে যাওয়ার পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সড়কটি মাটি ভরাট করে মেরামত করে এবং স্থানীয়রা মাটি ফেলে জমি কিছুটা উঁচু করে। ১৫ বছর পর ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে ভূমি দেবে যায়। এই স্থানটি সর্বপ্রথম ষাটের দশকের গোড়ার দিকে দেবে গিয়েছিল। ২০০৫ সালে রাস্তা ও একটি বাড়িসহ বিশাল এলাকা প্রায় ১৫ ফুট দেবে যওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল স্থানটি পরিদর্শন করেন। তারা মাটির নমুনা পরীক্ষা করে জানান, এখানকার মাটির গভীরে অতি মাত্রায় কাঁদামাটি ও পিট কয়লা জাতীয় পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে। যে কারণে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে গেলে এগুলো শুকিয়ে শূন্যতা তৈরি হয় এবং এর ফলে দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাপাসিয়া-শ্রীপুর সড়কের দসুনারায়ণপুর বাজারের পূর্ব পাশে দাসপাড়া এলাকার ২০ ফুট প্রস্থের পিচঢালা সড়কটির প্রায় আড়াইশ ফুট দেবে ১০ -১২ ফুট নিচে নেমে গেছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, এর আগে দেবে যাওয়ার সময় মাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। তবে তেমন কোনো কারণ বের করা যায়নি। ধারণা করছি, এই স্থানে বহু আগে কোনো নদী ছিল। বর্ষাকালে শীতলক্ষ্যায় পানি থাকার সময় জায়গাটি ভেজা থাকে বলে মাটি তার স্থানেই বসে থাকে। যখনই নদীর পানি নেমে যায় অর্থাৎ পাড়টি শুকিয়ে যায় তখনই এ রকম ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, ব্যস্ততম সড়কটি বন্ধ রয়েছে। দ্রুততম সময়ে সেটা চলাচলের উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগেকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কাপাসিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সমকালকে বলেন, একই স্থানে বারবার মাটি দেবে যাওয়ার ৩টা কারণ হতে পারে। প্রথমত এখানে হয়তো আগে কোনো নদী ছিল অথবা এই স্থানের নিচে কয়লা রয়েছে কিংবা শীতলক্ষ্যা থেকে বালু উত্তোলনের কারণেও হতে পারে। তবে স্থানীয়রা অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনকেই এই মাটি দেবে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলছেন।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের গাজীপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নিচে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। প্রকৃতিগতভাবেই একটা সময় আশেপাশের মাটি গিয়ে সে গর্তে পড়ে। ওই স্থানে হয়তো এমনটাই হয়েছে। এছাড়াও কয়লার লেয়ার থাকলেও অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটে। হতে পারে সেখানে কোনো এক সময় নদী ছিল। বিয়ষয়টি পরীক্ষা করা ছাড়া সঠিক কারণ বলা যাবে না। দেবে যাওয়া অংশে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
- বিষয় :
- সড়ক দেবে যাওয়া
- শীতলক্ষ্যা নদী
- শীতলক্ষ্যা