ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বগুড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বগুড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

প্রতীকী ছবি

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ | ১০:১৬ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ | ১০:৪৩

বগুড়ায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মুখে সদর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধেই 'প্রতারণার মাধ্যমে' বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগকারীদের একটি পক্ষ বলছে, যদি তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে তারা আদালতে যাবেন। অন্যপক্ষও ছাড় দিতে নারাজ। দু'পক্ষের এই মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) নতুন করে বেসামরিক গেজেট থেকে বগুড়া সদর উপজেলা এলাকার আরও ১১১ জনের তালিকা প্রকাশ করে তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠিয়েছে। এজন্য বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই কমিটি পুনর্গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ৭ ডিসেম্বর জামুকার মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম রোহেল স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রকাশিত ওই তালিকায় যদি কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তায় অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাহলে তিনি যাচাই-বাছাইয়ের আওতার বাইরে থাকবেন।

বগুড়া সদরে বর্তমানে ভাতা পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ৩৫০ জন। তাদের মধ্যে অনেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন বলে তালিকাভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকেই নানা সময়ে অভিযোগ করা হয়েছে। সে কারণে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি এবং নানা কারণে যাদের নাম ৫০ বছরেও তালিকাভুক্ত হয়নি তাদের অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী দু'জন মুক্তিযোদ্ধা এবং সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সমন্বয়ে সম্প্রতি একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত ২১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করে।

গত ২২ নভেম্বর সদরুল ইসলাম রঞ্জু নামে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা আমিনুল ইসলাম ঝন্টুর বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার অভিযোগ তোলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বরাবর লিখিত সেই অভিযোগে তিনি আমিনুল ইসলাম ঝন্টুকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে মন্ত্রণালয় ও জামুকার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠনেরও আবেদন জানান। অবশ্য আমিনুল ইসলাম ঝন্টু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে সমকালকে বলেন, 'যাচাই-বাছাই কার্যক্রম যাদের পছন্দ হয়নি, শুধু তারাই অভিযোগ তুলেছেন।'

প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ২৯ জনের বিরুদ্ধে ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি জমা হয়েছে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। সদরুল আনাম রঞ্জুসহ ৫২ জনের পক্ষ থেকে দাখিল করা সেই অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই ২৯ জন বগুড়া সদরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও অন্য জেলার প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এফএফ নম্বর (ভারতীয় তালিকা) ব্যবহার করে লাল মুক্তিবার্তা, সাময়িক সনদ এবং গেজেটভুক্ত হয়ে নিজেদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে আসছে।

অভিযোগের মুখে থাকা ২৯ জনের একজন শহরের ফুলবাড়ী এলাকার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, আমরা ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তারা (অভিযোগকারীরা) আমাদের এফএফ নম্বর হিসেবে যে নম্বরগুলো দেখিয়েছে, সেগুলো আসলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত বই এবং খণ্ডাংশের ক্রমিক নম্বর। তা ছাড়া আমরা যারা ৭ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি।

হেলাল উদ্দিনই পাল্টা অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বগুড়া কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, 'আব্দুল কাদের বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ২০০৩ সালে ভুয়া এফএফ, মুক্তিবার্তা ও সূচক নম্বর ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন।' আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসেবে নিলে অভিযুক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল কাদের বলেন, বিএনপি আমলে নয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নাম প্রথম লাল মুক্তিবার্তায় ওঠে ১৯৯৯ সালে। তা ছাড়া বগুড়ার সে সময় মুক্তিযুদ্ধের কয়েকজন সংগঠকের কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেও প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন।

ইউএনও আজিজুর রহমান জানান, তারা সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪০০ আবেদন পেয়েছেন। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছি। জামুকার প্রকাশ করা বগুড়া সদরের ১১১ জনের তালিকা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ১১১ জনের মধ্যে ১০২ জনের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছি। ৯ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে।

আরও পড়ুন

×