ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মা'কে ঢাকায় আনতে গিয়ে প্রাণ গেল ছেলের

মা'কে ঢাকায় আনতে গিয়ে প্রাণ গেল ছেলের

মনিরুল ইসলাম

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ | ১২:৪৩

ক্ষণিকের ভালোবাসা তীব্র হয়, বেশি দিলে হয় ক্ষয়। যাদের ভালোবাসায় মগ্ন এই মন, তারা দূরে থেকে আমার না হয়- শনিবার রাত ৮টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেষ স্ট্যাটাস ছিলো মনিরুল ইসলামের (১৫)। স্ট্যাটাসের ২৫ ঘণ্টা পরই পৃথিবী ছেড়ে চিরতরে বিদায় নিতে হবে তা জানা ছিলো না। গ্রামের বাড়ি থেকে মা'কে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যাচ্ছিল বাড়িতে। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার পথেই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় মনিরুলের।

রোববার রাত নয়টার দিকে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের গৌরীপুরের বেলতলী এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে চাপা দেয় একটি ট্রাক। নেত্রকোনার দুর্গাপুরগামী সিএনজি চালিত অটোরিকশাটিকে পেছন থেকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিন ব্যাক্তি নিহত হন। আহত হন নারীসহ আরও দুই জন।

নিহতদের একজন- মনিরুল ইসলাম। সে দুর্গাপুর উপজেলার ইন্দ্রপুর গ্রামের ভ্যাকু চালক মনসুর খানের ছেলে। মনিরুল ইসলামের মোহাম্মদপুর এলাকার আদাবর আইডিয়াল স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

জানা যায়, পরিবারের সঙ্গে মোহাম্মদপুর এলাকাতেই বসবাস করতো মনিরুল। মা আকলিমা খাতুন গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়িতে যাচ্ছিলো মনিরুল। বাস থেকে ময়মনসিংহ শহরে নামার পর বাড়িতে ফোনও করে সে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের এক ফোনে সব এলোমেলো হয়ে যায় পরিবারটির। মনিরুলের সঙ্গে থাকা মুঠোফোন থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর পৌঁছানো হয় পরিবারটির কাছে।

রোববার রাত সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের শ্যামগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় মনিরুলের বাবা মনসুর খানের সঙ্গে। সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ মনসুর খান। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলো মনিরুল। আদরের সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা যেনো কোনো দিশা পাচ্ছিলেন না। রাত ১২টার দিকে পুলিশি কাজ শেষ করে মনিরুলের লাশ তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিহতের বাবা মনসুর খান বলেন, ‘ওর (মনিরুল) মাকে নিতে বাড়িতে আতেছিল। কিন্তু বাড়িতে আর যাওয়া হয়নি। নিয়ে যেতে হচ্ছে সন্তানের লাশ।’

নিহতের চাচা মো. লিটন মিয়া বলেন, ‘বাড়ি যাওয়ার পথে মনিরুলদের বহনকরা সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে বেপরোয়া গতির ট্রাক চাপা দিলে তার ভাতিজার মৃত্যুর হয়। অত্যন্ত প্রাণোচ্ছল ছিলো মনিরুল।’

শ্যামগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সারোয়ার হোসেন বলেন, পেছন থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশাটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। এক স্কুলছাত্রের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×