ঘাটাইলের যুদ্ধাহত কিশোর মুক্তিযোদ্ধার সনদও বাতিল হচ্ছে!

আব্দুল বাছেদ করিম
মো. মাসুম মিয়া, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল)
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ১৫:৪৯
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার যুদ্ধাহত এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার সনদও যাচাই-বাছাইয়ের তালিকায় রয়েছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও গেজেট বাতিলের উদ্যোগে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। মো. আব্দুল বাছেদ করিম (৬২) নামে ওই মুক্তিযোদ্ধা একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে। বাড়ি ঘাটাইল পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া গ্রামে।
যার নেতৃত্বে তিনি যুদ্ধ করেছেন সেই কোম্পানি কমান্ডার খোরশেদ আলম তালুকদার (বীরপ্রতীক) বলেন, বাছেদ করিম আমার অধীনে যুদ্ধ করেছে। সে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তার গেজেট ও সনদ বাতিল করা মানে ঘাটাইলের সব মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান ও সনদ বাতিল করা। সাবেক টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফজলুল হক (বীরপ্রতীক) বলেন, আমি বাছেদ করিমকে চিনি এবং জানি। তিনি একজন প্রকৃত যুদ্ধাহত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা।
জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহ উদ্দিনসহ ৫১ জন অমুক্তিযোদ্ধার সনদ ও গেজেট বাতিলের সুপারিশ করেছে। চলতি বছর ১৯ নভেম্বর জামুকার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, মোসলেহ উদ্দিন বঙ্গবন্ধুর খুনি ও জেল হত্যা মামলার আসামি। বাকিদের বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াত আমলে গেজেট হওয়া মুক্তিযোদ্ধা। ক্ষোভ প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাছেদ করিম বলেন, জামুকার ওই তালিকা দেখে যে ব্যথা পেয়েছি, যুদ্ধে হাতেপায়ে গুলি লেগেও এত ব্যথা পাইনি। জামুকা হয়তো যুদ্ধে কিশোর বয়সে ঝরা রক্তের দাম দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। শুধু এই সম্মানটুকু নিয়ে মরতে চেয়েছিলাম। আমি স্বপ্ন দেখেছি দেশকে নিয়ে। এই জন্য শিক্ষকতার মতো মহান পেশা বেছে নিয়েছি। নিজের মতো করে গড়ে তুলেছি হাজারো শিশু-কিশোরকে। এখনও হাঁটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। গুলি লাগা হাতেও তেমন শক্তি পাই না।
ওই তালিকায় নাম থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কেন আমার নাম বাতিলের তালিকায় এলো আমি জানি না। তবে ঘাটাইল উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন যখন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পেতে আবেদন করেন, তখন আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ তিনি যুদ্ধাহত নন। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে তার এ কাজ মেনে নিতে পারছিলাম না। আমার ধারণা, তোফাজ্জল হোসেনই ওপরে তদবির করে এমন কাজ করিয়েছেন।'
বাছেদ করিমের অভিযোগের বিষয়ে তোফাজ্জল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, 'আপনার যা খুশি লিখে পাঠান আমার কোনো মন্তব্য নেই। অন্য কোনো জায়গা থেকে চাইলে হয়তো মন্তব্য করার চিন্তাভাবনা করব। আর আমি বিরোধিতা করলে অনেক আগেই সে (বাছেদ) বাদ পড়ত।'
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, স্থানীয়ভাবে এদের নাম এসেছে। সারাদেশ থেকে বিভিন্ন রিপোর্টের ভিত্তিতে তালিকা করা হয়েছে। তালিকা যদি প্রেসে চলে যায় তবে আমাদের হাত নেই। আর যদি গিয়ে না থাকে তবে আমরা বিষয়টি দেখব। আর তার (বাছিদ) আপিল করার সুযোগ আছে। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম যদি ভুলে তালিকায় আসে তবে সংশোধন করে দেওয়া হবে।
- বিষয় :
- ঘাটাইল
- যুদ্ধাহত কিশোর
- মুক্তিযোদ্ধা