ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ভাসানচরের পথে আরও ১ হাজার ৭৭২ রোহিঙ্গা

ভাসানচরের পথে আরও ১ হাজার ৭৭২ রোহিঙ্গা

ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক ও টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৮:০৮ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ | ১১:৪৯

কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে দ্বিতীয় দফায় স্বেচ্ছায় ৪২৭ পরিবারের আরও ১ হাজার ৭৭২ রোহিঙ্গা সোমবার বাসে করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বোর্ড ক্লাব থেকে তারা নৌবাহিনীর জাহাজ এলসিইউ (ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি) মাধ্যমে ভাসানচরে পৌঁছাবে। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়ে কক্সবাজার থেকে ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গা ভাসানচরে যায়।

সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয় এই রোহিঙ্গারা। সন্ধ্যায় আরও কয়েকটি বাসে তারা চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে। এর আগে এদের কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাসে করে এনে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠে অস্থায়ী পয়েন্টে রাখা হয়।

এদিকে ঢাকায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের চাপ দিয়ে স্থানান্তর করা হচ্ছে না। তারাই স্বেচ্ছায় যাচ্ছে। এ নিয়ে কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিদেশি গণমাধ্যমে জোর করে ভাসানচরে নেওয়ার যে খবর আসছে, তা সত্য নয়।

নোয়াখালীর ডিসি খোরশেদ আলম খান বলেন, কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে স্বেচ্ছায় রাজি হয়ে রোহিঙ্গা দলটি ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া ত্যাগ করে। তারা রাতে চট্টগ্রাম থেকে মঙ্গলবার ভাসানচরে রওনা হবে। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, 'রোহিঙ্গা নিয়ে ২৩টি বাস দ্বিতীয় দফায় ভাসানচরে যাত্রা করেছে। তবে সেখানে কতজন নারী-পুরুষ রয়েছে, সেটি এখন বলা যাচ্ছে না।

সোমবার সকালে সরেজমিনে টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে দেখা গেছে, সকাল ৮টায় ক্যাম্পে বাস এলে সিআইসি কার্যালয়ে প্রক্রিয়া শেষে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গাড়িতে তোলা হয় রোহিঙ্গাদের। তাদের মালপত্র ট্রাকে তোলা হয়। এ সময় তাদের স্বজনরা দেখতে ভিড় করেন। এর আগে তাদের মধ্যে অনেকের স্বজন প্রথম দফায় ভাসানচরে গেছেন। পরে বাসে করে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট ও কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ঘাটে প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। টেকনাফ শামলাপুর ক্যাম্পের ১০০ জন ভাসানচরের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করে।

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি এবং টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (সিআইসি) নওশের ইবনে হালিম বলেন, 'তার শিবির থেকে স্বেচ্ছায় একশ রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে। সকালে তারা ক্যাম্প থেকে উখিয়া রওনা দিয়েছে। এর আগে এ শিবির থেকে ২১ পরিবার ভাসানচরে গেছে।

ছোট বোন সঙ্গে নিয়ে ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রাকালে টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা রাজিয়া বেগম বলেন, 'আমি আর বোন নিজের ইচ্ছায় ভাসানচর চলে যাচ্ছি। কেউ আমাদের জোর করেনি। এই ক্যাম্প থেকে আরও অনেকে যাচ্ছেন। তাছাড়া ভাসানচরে যারা আছেন, তারা অনেক ভালো আছেন বলে ফোনে জানিয়েছিলেন। তাই আমরা উন্নত জীবনের আশায় সেখানে যাত্রা করছি।'

একই ক্যাম্পের বাসিন্দা ইমান হোসেন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভাসানচর পাড়ি জমানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, 'ক্যাম্পে অনেক কষ্টের জীবন। সেখানে অনেক ভালো শুনেছি, তাই সেখানে চলে যাচ্ছি। এতদিন এখানে বসবাস করেছি, এ জন্য একটু মায়া হচ্ছে।'

সবার ছোট সন্তান কোলে নিয়ে ভাসানচরে যাত্রার অপেক্ষা করছিল গাড়িতে মো. হোসেন। তিনি বলেন, 'পরিবারের আট সদস্য নিয়ে আমি ভাসানচরে চলে যাচ্ছি। সেখানে নিরাপত্তাসহ সব ব্যবস্থাপনা অনেক উন্নত। তাই আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেখানে চলে যাওয়ার। তা ছাড়া ভাসানচরে চলে যাওয়া লোকজন অনেক সুন্দর জীবনযাপন করছে।'

টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি আবুল কালাম বলেন, তার শিবির থেকে ২৫ পরিবারের ১০০ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া রওনা দিয়েছে। আজ সেখান থেকে তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। মঙ্গলবার তারা সকালে ভাসানচর পৌঁছাবে।

জানতে চাইলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-এর অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোশারফ হোসেন জানান, রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দলটি সোমবার সকালে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে। সেখান থেকে মঙ্গলবার সকালে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। আমরাও ভাসানচরে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

মোবাইল ফোনে ভাসানচর প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩) উপ-প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার এম আনোয়ারুল কবির জানান, মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দল ভাসানচরে পৌঁছাবে। আরআরআরসি কার্যালয় থেকে দুই হাজার জনের কথা বলা হয়েছে। আমরাও সেভাবে তাদের গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আসলে এ মুহূর্তে ঠিক কতজন সংখ্যাটা বলা মুশকিল।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বর্তমানে সেখানে ৩০৬ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছে, যারা সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে গত মে মাসে ফিরে এসেছিল।

আরও পড়ুন

×