ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ভেকুর চাকায় পিষে শিশুকে হত্যার অভিযোগ

ভেকুর চাকায় পিষে শিশুকে হত্যার অভিযোগ

নিহত লিপু -সংগৃহীত ছবি

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ | ১০:৪৩ | আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ | ১০:৫৩

সকালে ঘুম থেকে উঠেই বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে বের হয় শিশু জোবায়েল হোসেন লিপু  (৬)। পাশের বাড়ির রেদুয়ানসহ তিন বন্ধু মিলে বংশী নদীর পারের একটি সর্ষে ক্ষেতে এসে দাঁড়ায়। এসময় দেখতে পায় নদীর তীর থেকে একটি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শিশু লিপু আহম্মদসহ তিনবন্ধু একসঙ্গে ছুটে যায় মাটি কাটার দৃশ্য দেখার জন্য। ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকে তুলে দেওয়ার দৃশ্য দেখতে দেখতে নরম মাটিতে তিন বন্ধু মিলে ছুটাছুটি করতে থাকে। এসময় ভেকুর চালক রাসেল মিয়া ওই তিন শিশুকে বকাঝকা করেও সরাতে না পেরে ভেকুটি তাদের ওপর দিয়েই চালানোর চেষ্টা করে। এ সময় দুই শিশু দৌড়ে পালাতে পারলেও লিপু আহম্মেদ ভেকুর চাকার নিচে চাপা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে লিপুর মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে যায়। ওই সময় চালক রাসেল আবার ভেকু পেছনে এনে শিশুটিকে মাটিচাপা দিয়ে লাশ গুম করার চেষ্টা করে। 

ততক্ষণে পালিয়ে যাওয়া দুই শিশু লিপুর পরিবারের কাছে ভেকুর চাকার নিচে পড়ার খবর জানিয়ে দেয়। লিপুর পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে আসামাত্রই ভেকু চালক রাসেল পালিয়ে যান।

এভাবেই গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের জালশুকা এলাকার বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে চালক রাসেল শিশু লিপুকে ভেকুর চাকায় পিষে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে শত শত গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে।

শিশু জোবায়েলের স্বজনদের আহাজারি- সমকাল

এলাকাবাসী, পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, জালশোকা গ্রামের পাশেই ক্ষেত থেকে একটি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে কেউ। কৌতুহলী শিশুরা দৌড়ে সেই মাটি কাটা দেখতে এসে দাঁড়ায় ভেকুর কাছে। সেখানে তারা খেলাধুলা করতে শুরু করে। এসময় ভেকুচালক একাধিকবার শিশুদের খেলতে মানা করলেও শিশুরা শোনেনি। পরে চালক রাসেল ক্ষুব্দ হয়ে ভেকুটি শিশুদের ওপর তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় দুই বন্ধু দৌড়ে সরে গেলেও লিপু আহম্মেদ ভেকুর চেইনের চাকার নিচে পড়ে মাটিতে ডেবে যায়। এসময় চালক রাসেল পেছনে ভেকুটি নেওয়ার চেষ্টা করলে দিপুর মাথা ফেটে যায়। শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে যায়। লিপু ভেকুর নিচে পড়েছে এ খবর অন্য শিশুরা তার বাড়িতে জানিয়ে দেয়। খবর পেয়ে লিপুর দাদা নেহাজ উদ্দিন ঘটনাস্থলে প্রথমে গিয়ে চালককে ধরার চেষ্টা করেন। এসময় চালক ভেকু ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। 

পুলিশ জানায়, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শতশত গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে এসে হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশু লিপুর ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহম্মদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এছাড়া ভেকুটি জব্দ করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।

নিহত লিপু জালশোকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বড় বোন জাকিয়া আক্তার (৯) একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। শিশু লিপু আহম্মেদের মা জোসনা বেগম ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। নিহত লিপুর শোকে উত্তর কাঞ্চনপুর গ্রামের অধিকাংশ নারী পুরুষের চোখেই অশ্রু।

গ্রামবাসীরা জানানয়, গত বুধবার থেকে জালশোকা গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আলীমের ভাই সিরাজ উদ্দিন, গাজীপুর জেলা পরিষদের সদস্য ফালাক মৃধার ছেলে রুকনুজ্জামানা, মাটি ব্যবসায়ী মুরাদ, জাহিদুল ইসলাম নদীর পারের সরকারি ও ব্যক্তিগত ক্ষেত থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় দেওয়া শুরু করেন। দুর্ঘটনার পর মাটি ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়।

এব্যাপারে আটাবহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ইয়াছিন বলেন, ওই মাটি ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে শিশু লিপুকে হত্যা করেছে। আমি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।

নিহত শিশুর দাদা নেহাজ উদ্দিন বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমের ভাই সিরাজ উদ্দিন আমার নাতিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।

চাচা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ভাতিজা লিপুকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।

কালিয়াকৈর থানার ওসি (অপারেশন) মুজাহিদুল ইসলাম জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহম্মদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×