পাঁচ দিনের উৎসব শুরু
বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার তিন পার্বত্য জেলায়

ছবি: সমকাল
রাঙামাটি অফিস
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২১ | ১০:০৫
রংপুর থেকে এসেছেন সুমিয়া বিনতিয়া সারা। তিনি জানালেন, অ্যাডভেঞ্চারের মাধ্যমে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। সমতল আর পাহাড়ের মধ্যে যে পার্থক্য, তাও বুঝতে এবং একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করতে পারবেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষার্থী ননাবী চাকমা বললেন, ভ্রমণের নেশা, নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের বিষয়টি তো আছেই, তার ওপর এই রাঙামাটিতেই আমার শেকড়, এখানেই আমার জন্ম। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন করে তিন পার্বত্য জেলাকে দেখা, জানা ও অবিস্কারের সুযোগ সৃষ্টি হলো। আরেক প্রতিযোগী ঢাকার নুরসাত জাহান নিশু। তিনি বলেন, এই অ্যাডভেঞ্চার প্রতিযোগিতা থেকে অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে যেতে পারব। একই সঙ্গে নিজেকে সামর্থ্যবান করে গড়ে তুলতে পারব, যাতে কেউ বলতে না পারেন সমাজে মেয়েরা পিছিয়ে আছে।
রাঙামাটিতে তারা এসেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অ্যাডভেঞ্চার উৎসবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে তিন পার্বত্য জেলা- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন হয়েছে সোমবার। প্রতিযোগিতার মধ্য আছে ট্রেইল রান ও পেলিং, কানিওনিং, কায়াকিং, ট্র্যাকিং, রোপ কোর্স, কেভ ডিসকভারি, হাইকিং ও ট্রেইল রান, ট্রেজার হান্ট, ক্যাম্প ওরিয়েন্টেশন, হাইকিং, ফুরমোন পাহাড় ট্র্যাকিং ইত্যাদি।
বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় গতকাল রাঙামাটি চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দীপংকর তালুকদার এমপি, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেকুর রহমান, জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ, জেলা পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম নিজামী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এক-দশমাংশজুড়ে নয়নাভিরাম ও প্রকৃতি সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই পার্বত্য চট্টগ্রাম। এ অঞ্চলে রয়েছে মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তিনি বলেন, অ্যাডভেঞ্চার না হলে এখানে কোনো প্রাপ্তি নেই। অ্যাডভেঞ্চাররা সফলকাম হলেই তাদের জীবনে বড় প্রাপ্তি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দীপংকর তালুকদার বলেন, অ্যাডভেঞ্চারের মাধ্যমে বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, নতুনকে জানা ও নিজের বোধকে জাগ্রত করা যায়।
আলোচনা শুরুর আগে বিভিন্ন জাতিসত্তার শিশুশিল্পীরা শতকণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। এরপর উৎসবের টিম সংগীত পরিবেশন করা হয়। এর আগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষ উদযাপনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতেই এই আয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে দেশ-বিদেশে উপস্থাপন করা, রোমাঞ্চপ্রিয় তরুণদের উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অ্যাডভেঞ্চারমূলক কার্যক্রমে তাদের উদ্বুদ্ধ করা, তরুণদের মধ্যে সাহস ও দেশপ্রেম জাগ্রত করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো এবং এ অঞ্চলে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
উৎসবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে একশ প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে পার্বত্য তিন জেলা থেকে ৫০ জন। এর মধ্যে নারী প্রতিযোগী আছেন ৪৩ জন। উদ্বোধনের পর একশ প্রতিযোগীর মধ্যে রাঙামাটি জেলায় ৪০ জন, বান্দরবানে ৩০ ও খাগড়াছড়িতে ৩০ জন প্রতিযোগী বিভিন্ন ইভেন্টে যোগ দিতে চলে যান।
উৎসবের মধ্যে প্রথম দিকে গতকাল রাঙামাটির ঘাগড়াছড়া কলাবাগান এলাকায় ট্রেইল রান ও রেপলিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার জার্মপ্লাজম সেন্টারে ক্যাম্প ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটবে।