চসিক নির্বাচন: ৭১ বছর বয়সী মিন্টুর 'লাকি সেভেন'

সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২১ | ১১:৪১
চট্টগ্রাম সিটির ভোটে কাউন্সিলর পদে কারও দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হওয়ার ঘটনা আছে। তবে বন্দরনগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রম সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ জনপ্রতিনিধি এবারসহ টানা সাতবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে পূর্ণ করলেন 'লাকি সেভেন'। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে এ এক অনন্য নজির।
সিটি করপোরেশনের ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে ভোটের মাঠে থাকা চার প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেছেন ৭১ বয়সী মিন্টু। তিনি পেয়েছেন দুই হাজার ৭৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেলোয়ার হোসেন পেয়েছেন মাত্র ৭৪৭ ভোট।
১৯৭৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাতটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন নির্লোভ ও সাদামাটা জীবনযাপন করা সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। কোনোবারই তাকে কেউ হারাতে পারেনি। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির শাসনামলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করায় সেই নির্বাচনে কেবল অংশ নেননি তিনি। কিন্তু পরবর্তী সবক'টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে অংশ নিয়ে প্রতিবারই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুরোধে ৪৮ বছর বয়সে সংসারজীবন শুরু করলেও চকবাজারের মানুষই তার কাছে সত্যিকারের সংসার, পরিবার। সপ্তমবারের মতো নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধি সহজসরল জীবনযাপন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি নিরামিষভোজী। নেই বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি। আছে কয়েকটি দোকানঘর। সেগুলোই ভাড়া দিয়ে চলেন।
টানা সাতবার রেকর্ড গড়ার অনুভূতি জানতে চাইলে সাইয়ে্যদ গোলাম হায়দার মিন্টু বলেন, 'সপ্তমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে আমি আনন্দিত। চকবাজার ওয়ার্ডের মানুষদের আমি সবসময় নিজের পরিবার মনে করেছি। সবসময় নিজের সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে এলাকাবাসীর পাশে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি। ভোট দিয়ে তারা আমাকে ভালো কাজের মূল্যায়ন করেছে এবারও। চকবাজারবাসীর কাছে আমি চিরঋণী। দলও আমার ওপর যে আস্থা রেখেছে, এবারও জয়ী হয়ে তার প্রতিদান দিতে পেরে আমি স্বস্তি বোধ করছি।' অতীতের মতো আগামীতেও এলাকাবাসীর হয়ে, তাদের পাশে থেকে আজীবন তাদের সেবা করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমেই তার কর্মজীবনের শুরু। সিটি করপোরেশন প্রদত্ত কাউন্সিলর ভাতা দিয়েই তিনি তার দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করেন। ছাত্রজীবন থেকে বামপন্থি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে যুক্ত হন সমাজসেবায়। স্বল্পাহারী ও মিষ্টভাষী এই জনপ্রতিনিধির একটি বড় গুণ, তিনি সহজেই সমাজের সব স্তরে মিশে যেতে পারেন। এলাকার সবার কাছে 'মিন্টু ভাই' নামে পরিচিত তিনি।
চকবাজার ওয়ার্ডের কাপাসগোলার বাসিন্দা রুমন ভট্টাচার্য্য সমকালকে বলেন, 'একজন নির্লোভ মানুষ সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। পরহিতৈষী মিন্টু ভাইয়ের মতো মানুষকে কাউন্সিলর হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। একজন জনপ্রতিনিধি কতটুকু জনপ্রিয় হলে টানা সাতবার বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হতে পারেন? তার মতো পুরো সিটির আর কোনো ওয়ার্ডে এভাবে টানা জয়ের রেকর্ড নেই। বাসিন্দাদের বিশ্বাস ছিল তিনি এবারও জয়ী হবেন। আবার এলাকার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় বাসিন্দারা খুশি।'
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা কানিজ ফাতেমা বলেন, 'এলাকার জন্য নিবেদিত, ভালো আচরণ ও সবসময় মানুষের পাশে থাকার গুণেই এলাকাবাসী তাকে এবারসহ টানা সাতবার নির্বাচিত করেছেন। সারাবছরই তিনি কাজের মাধ্যমে বাসিন্দাদের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেন। ব্যতিক্রমী গুণাবলির কারণে এলাকার ভোটারদের দৃষ্টিতে তিনি সর্বদা একজন যোগ্য প্রার্থী। যার প্রমাণ এবারও দিয়েছেন বাসিন্দারা।'