ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

পুলিশের বিরুদ্ধে মেয়র প্রার্থীকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ, থানা ঘেরাও

পুলিশের বিরুদ্ধে মেয়র প্রার্থীকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ, থানা ঘেরাও

বিক্ষোভ মিছিল করে থানা ঘেরাও সমর্থকদের- সমকাল

মাদারীপুর সংবাদদাতা

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১১:১০ | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১১:৩৩

মাদারীপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মসিউর রহমান ওরফে সবুজকে গাড়িতে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাকে তুলে নেওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানা ঘেরাও করেন তার কয়েক হাজার সমর্থক। পরে তারা কালকিনি থানার তিন মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে ও যানবাহন ভাঙচুর করে যানচলাচল বন্ধ করে দেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) এসএম হানিফের সমর্থকরা সেখানে এলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউরের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

শনিবার বিকেলে উপজেলার পালপাড়া এলাকা থেকে মেয়র প্রার্থী মসিউরকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার সমর্থকরা বলছেন, ওসির গাড়িতে মাদারীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যাওয়ার পর থেকে মসিউর রহমান নিখোঁজ রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষস্থল থেকে কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া যায়। সংঘর্ষে লিপ্ত লোকজন এ সময় অন্তত দুই শতাধিক দোকানঘর ভাঙচুর করে লুটপাট করে। রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। মেয়র প্রার্থী মসিউরের মুক্তি চেয়ে তার সমর্থকরা এক ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে থানা এলাকায় নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, বিকেল ৫টার দিকে কালকিনি পৌর এলাকার পালপাড়ায় সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগে নামেন নারকেলগাছ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মসিউর রহমান। হঠাৎ কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিরউদ্দিন মৃধা তাকে ডেকে তার গাড়িতে তোলেন। পরে তিনি মসিউর রহমানকে নিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নেওয়ার পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

 টায়ার জ্বালিয়ে ও যানবাহন ভাঙচুর করে যানচলাচল বন্ধ করে দেন বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা- সমকাল

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমানের চাচাতো ভাই রমিজ হাওলাদার বলেন, বিনা কারণে আমার ভাইকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ। তার কোনো সন্ধান নেই। ওসির কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান ভাই (মসিউর) নাকি ঢাকায় গেছেন। কিন্তু আমার ভাই নির্বাচন রেখে ঢাকায় কেন যাবেন? আর সেটা পুলিশের গাড়িতে কেন? এখানে পুলিশ সুপার অর্থের বিনিময়ে নৌকার পক্ষ নিয়ে ষড়যন্ত্র করতেই আমার ভাইকে গুম করার চেষ্টা করছেন।

কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিরউদ্দিন মৃধা বলেন, মেয়র প্রার্থী মসিউর তার ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় যাবেন। আমি মাদারীপুরে যাচ্ছিলাম, তাই তিনি আমার গাড়িতে চড়ে মাদারীপুর গেছেন। এরপর তিনি কোথায় গেছেন, তা আমি জানি না।

এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী এসএম হানিফ বলেন, নির্বাচনের আগে এমন হামলা, অগ্নিসংযোগ, মারপিট একদমই কাম্য নয়। সন্ধ্যায় আমার পার্টি অফিসে মিটিং ছিল। তখন আমার সমর্থকরা নৌকা নৌকা বলে মিছিল নিয়ে আসে। এ সময় আমার প্রতিপক্ষ তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। প্রতিপক্ষের হামলায় আমারই সব লোকজন আহত হয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউরকে পুলিশ তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এসএম হানিফ বলেন, মসিউর কোথায় আছেন, কেন পুলিশ তাকে নিয়েছে, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তিনি যে নিখোঁজ তাও শুনিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। এখানে এসে জেনেছি, স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ধরনের খবর ছড়িয়ে পড়লে সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে থানা ঘেরাও করেন। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশ ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আরও পড়ুন

×