ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

কবর খুঁড়ে লাশ খাওয়ার অজুহাতে পিটিয়ে মারা হলো প্রাণিটিকে

কবর খুঁড়ে লাশ খাওয়ার অজুহাতে পিটিয়ে মারা হলো প্রাণিটিকে

পিটিয়ে মারা প্রাণিটি -সমকাল

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ০৪:০৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরগরে কবর খুঁড়ে লাশ বের করার অজুহাতে বিরল প্রজাতির একটি প্রাণিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রোববার সকালে সাবেক ইউপি সদস্য রহমত আলীর বাড়ির পাশে একটি পুকুরে স্থানীয়রা প্রাণিটিকে হত্যা করে।

খবর পেয়ে অপরিচিত এই প্রাণিটিকে দেখতে সকাল থেকে ইউপি সদস্যের বাড়িতে আশাপাশের মানুষ ভিড় করছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গুনিয়াউক ইউনিয়নের চিতনা গ্রামের।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানায়, এটি একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি। সাধারণত এ প্রাণিটি ইন্ডিয়ান পাম সিভেট বা গন্ধগোকুল নামেই পরিচিত। এটি মাংসাশী প্রাণি না, ফলমূল ও পকোমাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। এটি পাঁচ থেকে আট ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

স্থানীয়দের দাবি, কবরস্থানে নতুন নতুন লাশ দাফন করা হলে রাতের আঁধারে সেটি তুলে খেয়ে ফেলে প্রাণিটি। গত তিন মাসে পাঁচ থেকে ছয়টি লাশ কবর থেকে তুলে খেয়েছে এই প্রাণি। শনিবার হযরত আলী নামে এক ব্যক্তি মারা যান। তাকে দাফন করা হলে রোববার সকালে এই প্রাণিটিকে কবরের মাটি খুঁড়তে দেখলে স্থানীয়রা সেটিকে পিটিয়ে হত্যা করে।

নাসিরনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, এ প্রাণিটি কখনোই মাংসাশী না। প্রাণিটা গন্ধগোকুল নামেই পরিচিত। এটি ফলমুল, ইদুঁর ও কীটপতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকে। 

তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসী হয়তো আতঙ্কিত হয়ে এবং ভুল ধারণা থেকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিটিকে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ যদি আগে থেকে খবর পেত তাহলে সেটিকে জীবিত উদ্ধার করতো।

লেখক ও গল্পকার সোহরাব শান্ত সমকালকে বলেন, মৃত প্রাণিটি দেখে গন্ধগোকুল বলে মনে হচ্ছে। এটি এলাকাভেদে গাছ খাটাশ, ভোদর, এশিয় তাল খাটাশ ও সাইরেল নামে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে বিরল প্রজাতির প্রাণি ধরা পড়ার সংবাদ পড়ে যতটুকু জানি, গন্ধগোকুল লোকালয়ের কাছাকাছি ঝোপজঙ্গলে বসবাস করে। রাতের বেলায় খাবারের সন্ধানে বের হয়। এরা মুরগি, কবুতরের বাচ্চা, ইঁদুর, ফলমূল, সবজি, তাল বা খেজুরের রস খেয়ে জীবন ধারণ করে। এটা কখনোই মানুষের মাংস খেতে পারে না। কবরের লাশ তুলে খাওয়ার কথাটি সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন।

ইউএনও নাজমা আশরাফী বলেন, বিরল প্রজাতির এই প্রাণিকে হত্যা করা খুবই দুঃখজনক। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র টিকিয়ে রাখতে হলে বিলুপ্ত সকল প্রাণিকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন

×