ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

হালদার পোনায় হালদা ভরবে মাছে

হালদার পোনায় হালদা ভরবে মাছে

চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে রেণু। সেগুলো থেকে উৎপন্ন পোনা নদীতে ছাড়ার উপযোগী হলে আবার অবমুক্ত করা হচ্ছে হালদায়। সাম্প্রতিক ছবি- সমকাল

শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১ | ১৫:০৯

কার্প জাতীয় মা মাছের মজুদ বাড়াতে হালদা নদীর পোনা প্রক্রিয়া করে তা পুনরায় হালদায় ফেলার ব্যতিক্রমী পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। জিনগত বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখেই চলতি বছর ১০ হাজার পোনা অবমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এর মাধ্যমে হালদার পোনায় মাছে ভরে উঠবে হালদা। এ উদ্যোগের ফলে মাছের মজুদ কয়েকগুণ বাড়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে বাড়বে ডিমের পরিমাণও। যা দেশের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে রাখবে বড় অবদান। এমন যুগোপযোগী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীসহ স্থানীয়রাও।

আগে স্থানীয় হ্যাচারি থেকে কিনে কার্প জাতীয় মাছ ছাড়া হতো হালদা নদীতে। যে কারণে এসব মাছ থেকে পাওয়া যেত না আশানুরূপ ফল। তবে হালদার পোনা যথেষ্ট মানসম্পন্ন হওয়ায় ডিম থেকে ফোটানো রুই, কাতলা ও মৃগেলের পোনা হালদায় ছাড়ার উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। গত বছরের মে মাসে হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়লে সেই ডিমের রেণু কিনে হালদা পাড়ের গড়দুয়ারা ইউনিয়নের একটা বিশেষ মডেল পুকুরে সংরক্ষণ করে পোনা বড় করার কাজ শুরু করা হয়। পুকুরটি নিয়মিত নিবিড় পরিচর্যায় রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। মাছের স্বাস্থ্য ও আকার পরীক্ষা করতে বেশ কয়েকবার পুকুরে জাল ফেলারও ব্যবস্থা করেন তিনি।

কয়েক মাস থাকার পর প্রতিটি মাছ ৬ ইঞ্চি বা ৭০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। উপযুক্ত করেই সেসব মাছ ফেলা হচ্ছে হালদায়। এখন পর্যন্ত তিন দফায় প্রায় ছয় হাজার পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। হালদা থেকে হারিয়ে যাওয়া কালিবাউশ মাছের সংখ্যা বাড়াতে এরই মধ্যে বেশকিছু সংখ্যক পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। সাধারণত একটি মা মাছ আড়াই থেকে তিন কেজি হলেই ডিম ছাড়ার উপযুক্ত হয়।

হালদায় মাছের মজুদ বাড়ানোর নেপথ্যে থাকা হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন সমকালকে বলেন, প্রশিক্ষিত নিজস্ব মানুষ রেখে মডেল পুকুরে মাছের প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে। মাছ বড় হওয়ার পেছনে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় তার সব ব্যবস্থা করেছি। এসব কারণে এরই মধ্যে ভালো সফলতাও মিলেছে। বিশেষ পুকুরে ফেলা পোনা থেকে কম সময়েই আশানুরূপ বড় আকারের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। উপযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেসব মাছ অবমুক্ত করা হচ্ছে হালদায়। অবমুক্ত করা পোনার অংশবিশেষও যদি বাঁচে, তবে হালদায় মা মাছের সংখ্যা কয়েক বছরের মধ্যে অনেকগুণ বাড়বে।

হালদা বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, হালদার পোনা হালদাতে ছাড়ার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। মডেল পুকুরের মাধ্যমে খুব কম সময়ে মাছ বড় হয়। ৬ ইঞ্চি বা তার বেশি আকারের মাছ হালদায় অবমুক্ত করলে তা নদীর পরিবেশের সঙ্গে সহজে খাপ খেতে পারে। এতে একদিকে যেমন মাছ কম সময়ে বড় হবে; তেমনি হালদায় মাছের পরিমাণও কয়েকগুণ বাড়বে।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে উপযুক্ত পাঁচ হাজার পোনা অবমুক্ত করা হয় হালদায়। নদীর মদুনাঘাট সংলগ্ন অংশে হাটহাজারীর সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদের উপস্থিতিতে এসব পোনা অবমুক্ত করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এজন্য প্রয়োজনে আরও আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এটি দেশের মৎস্য খাতে অনেক বড় অবদান রাখবে।

হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী আব্দুল কাদের বলেন, কিছু অসাধু মানুষের অরাজকতার কারণে হালদার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। গোপনে মাছ ধরার প্রভাব পড়ছে মাছের মজুদে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও নানা উদ্যোগের ফলে আশার আলো দেখছি আমরা। আরেক ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, এমন উদ্যোগে আমার মতো সব ডিম সংগ্রহকারী খুশি।

গত বছরের ২২ ডিসেম্বর হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। মুজিববর্ষের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

আরও পড়ুন

×