বগুড়ায় মার্কেট খুললেও ভিড় কম, ক্রেতাদের অধিকাংশই নারী

ছবি: সমকাল
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২১ | ০৫:১২
বগুড়ায় দোকানপাট খোলার প্রথমদিন রোববার শহরের মার্কেটগুলোতে কেনা-কাটা করতে আসা লোকজনের ভিড় কম রয়েছে। এ দিন যারা কেনাকাটা করতে আসেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন নারী। ক্রেতাদের বেশিরভাগই মাস্ক পরা ছিলেন। তবে ব্যবসায়ীদের অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। যদিও বগুড়ার সবচেয়ে বড় মার্কেট হিসেবে পরিচিত নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, প্রতিটি দোকানের মালিক-কর্মচারীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষত মাক্স ব্যবহার করতে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ জানান, তারা সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়গুলো কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন।
চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমে গত ৫ এপ্রিল সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে সরকারি- বেসরকারি অফিস, দোকান-পাট ও মার্কেটগুলো এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে সেই বন্ধের সময়সীমা ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হলেও সাধারণ মানুষের জীবিকার প্রয়োজনে সরকার ২৫ এপ্রিল থেকে মার্কেটগুলো খোলা রাখার সুযোগ দেয়। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টায় খোলার পর বিকেল ৫টার মধ্যে তা বন্ধের শর্ত দেওয়া হয়।
বগুড়ায় দোকান-পাট বন্ধ ঘোষণার আগের দিন ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। তার ১১দিনের মাথায় মার্কেট খোলার আগের দিন ২৪ এপ্রিল করোনায় আক্রান্তের হার ১৯ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১০ দশমিক ৩২ শতাংশে নেমে আসে। তবে ওই ১১ দিনে জেলায় মোট ৫৯০জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৭জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু বিধিনিষেধের কারণে জেলায় আপাতত সংক্রমণের হার কমেছে। তবে যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি তাহলে সংক্রমণ আবারও বাড়বে।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে শহরের নিউ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশ পথে স্বয়ংক্রিয় জীবাণুনাশক স্প্রে সম্বলিত গেট স্থাপন করা হয়েছে। তার ভেতর দিয়ে লোকজনকে প্রবেশ করতে হচ্ছে। তবে গত বছর ঈদের দুই সপ্তাহ আগে মার্কেটটিতে যেমন ভিড় দেখা গেছে এবার তেমন ভিড় নেই। আর ক্রেতাদের অধিকাংশই নারী। কাপড় এবং স্বর্ণালংকারের দোকানগুলোতেই তাদের বেশি কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। অবশ্য এক বছরের মধ্যে যে লক্ষণীয় পার্থক্য চোখে পড়েছে তা হলো- গত বছর ১০ মে যখন মার্কেটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছিল তখন সেখানে কেনাকাটা করতে যাওয়া অধিকাংশ নারী-পুরুষের মুখে মাস্ক ছিল না। আর এবার মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। তবে দু’একজনের মাস্ক মুখের নিচে থুতনিতে আটকে রাখতে দেখা গেছে। ক্রেতাদের তুলনায় এবারও বিক্রেতাদের বেশ অসচেতন মনে হয়েছে। প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনে কাগজের ওপর ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ লেখা ঝুলতে দেখা গেলেও প্রথম দিন সিংহভাগ দোকান মালিক-কর্মচারীর মুখে মাস্ক ছিল না। প্রায় একই অবস্থা শহরের অন্য মার্কেটগুলোতেও।
বগুড়া শহরের শিববাটি এলাকা থেকে কেনা-কাটা করতে আসা মাশহুরা খাতুন নামে এক নারী জানান, ঈদের পর তার এক নিকটাত্মীয়ের বিয়ের জন্য তিনি গহনা কিনতে এসেছেন। মুখে মাস্ক পরা ওই নারী জানালেন, জুয়েলারি দোকানগুলোর মালিক-কর্মচারীরা মাস্ক পড়লেও আশ-পাশের কাপড়ের দোকানে বসে থাকা কারো মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন শহরের সুত্রাপুর এলাকার গৃহবধু বিউটি বেগম। তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ কাপড়ের দোকানের মালিক-কর্মচারীরা এখনও অসচেতন। আমাদেরই বলে বলে তাদের মাস্ক পড়াতে হচ্ছে।’
নিউ মার্কেটের আফজাল ক্লথ স্টোরের মালিক মামুন জানান, মার্কেট খুললেও প্রথম দিন তেমন বেচা-কেনা ছিল না। তিনি বলেন, ‘হয়তো আরও দু’একদিন বাদে মার্কেটে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়বে।’
বৃহত্তর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতি বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ জানান, মার্কেটের ৪টি প্রবেশপথে স্বয়ংক্রিয় জীবাণুনাশক স্প্রে সম্বলিত গেট স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি দোকান মালিক ও কর্মচারীরা যাতে যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি মেনে বেচা-কেনা করেন সে বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছি। তার পরেও কেউ বিধিনিষেধ অমান্য করছেন কি’না সেগুলো আমরা মনিটর করবো।’
বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, গত কয়েকদিন ধরে চলা বিধি নিষেধের কারণে জেলায় করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি তাহলে সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে। সেজন্যই সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
- বিষয় :
- বগুড়া
- মার্কেট
- ভিড়
- করোনা সচেতনতা