ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

জুতাপেটা করে জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানো হলো তাদের

জুতাপেটা করে জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানো হলো তাদের

ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

মাদারীপুর সংবাদদাতা

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২১ | ১০:১৭

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সুতারকান্দি গ্রামে পরকীয়ার অভিযোগে এক নারী ও পুরুষকে জুতাপেটা করেছেন স্থানীয় সালিশকারীরা। পরে তাদের জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘোরানো হয়। গত ১৯ এপ্রিল এই ঘটনা ঘটলেও  মঙ্গলবার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সালিশকারী তিনজনকে গত রোববার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সদর উপজেলার এক ব্যক্তির (৪০) সঙ্গে রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের এক ব্যক্তির স্ত্রী (৫০) ‘ধর্মের ভাই’ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে তারা ‘ভাই-বোন’ হিসেবে উভয়ের বাড়িতে আসা–যাওয়া করেন। গত ১৯ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে ওই ভাই বোনের বাড়িতে আসেন। সেদিন ওই বোনের স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। ওই ভাই বোনের বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পরই একই বাড়ির কালু ফকির, ইমরান ফকির, শাকিব আকন, রানা ফকির, শামীম ফকিরসহ ৮-১০ জন তাদের ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে বের করে আনেন। পরে তারা ওই ভাই-বোনকে বেঁধে ফেলেন। একপর্যায়ে বাড়ির উঠানে সালিশ বসানো হয়। সালিসে মাতবররা কারও বক্তব্য না শুনে ইচ্ছেমতো রায় দেন। পরে ওই দুজনকে ১০০টি করে জুতার বাড়ি, জুতার মালা পরিয়ে পুরো এলাকা ঘোরানোর রায় দেওয়া হয়। এছাড়াও ওই নারীর ঘরে তালা ঝুলিয়ে তাকে এলাকা থেকে বের করাসহ ও সমাজচ্যুত করার রায় দেন মাতবররা। রায় ঘোষণার পরপরই ইমরান ফকির, কালু ফকির, আজিজুলসহ ৮-১০ জন এলাকাবাসীর সামনে ওই দু'জনকে জুতা দিয়ে ১০০টি বাড়ি দেন। পরে জুতার মালা পরিয়ে ভুক্তভোগী দু'জনকে সারা এলাকা ঘোরানো হয়। একই সঙ্গে ওই নারীর ঘরে তালা ঝুলিয়ে তাকে এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সালিশকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করেননি।

এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে সালিশকারী কালু ফকির, ইমরান ফকির, শামীম ফকিরসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করে রাজৈর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর স্বামী। পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সালিশকারী কালু ফকির, আজিজুল ফকির ও শাকিব আকনকে রোববার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘ওরা আমাকে ও আমার ভাইকে জোর করে বেধেঁ গ্রামের সবার সামনে ১০০টি জুতার বাড়ি দিয়েছে এবং জুতার মালা পরিয়ে সারা গ্রাম ঘুরিয়েছে। আমার ঘরে তালা দিয়েছে। এখন আর বাঁচার ইচ্ছে নেই আমার। আমি এর বিচার চাই।'

ওই নারীর স্বামী বলেন, দীর্ঘ ৩৬ বছরের সংসার আমার। আমার স্ত্রীর চরিত্র খারাপ না। আমার স্ত্রী কোনো অপরাধ করলে আমিই মাতবরদের বিচার দিতাম। তারা কেন আমার স্ত্রী ও আত্মীয়কে জুতাপেটা করে জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ঘুরিয়ে সন্মান নষ্ট করলো? এখন আমাদের সমাজচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছে। ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিয়েছি, নাতি-নাতনি আছে, আমরা কীভাবে মানুষকে মুখ দেখাব। বিচার না পেলে সবাই বিষ খেয়ে মরে যাব।'

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তারা মিয়া বেপারী বলেন, ‘ধর্মের ভাই-বোনকে কথিত বিচারের নামে একটি প্রহসনের সালিশ বসানো হয়। সালিশে ওই নারীর কোনো কথা না শুনে মাতবররা নিজেদের ইচ্ছেমতো রায় দিয়েছের। বিচারের নামে ওই নারী ও তার ধর্ম ভাইকে যে অপমান করা হয়েছে, তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. সাদিক বলেন, ‘ঘটনা শোনার পরই মামলা নিয়েছি। এক দিনের মধ্যে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার মূল হোতা কালু ফকিরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।'

আরও পড়ুন

×