চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প তদারকিতে কমিটি গঠন

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ছবি: সমকাল
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২১ | ১০:৩২
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান এবং সিটি মেয়র ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে এই কমিটি গঠন করা হয়। তবে কমিটির সদস্য সংখ্যা চূড়ান্ত করা হয়নি। কমিটি প্রতি মাসে প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবে।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, দখল ও দূষণ রোধে গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য এই সভার আয়োজন করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
কবে নাগাদ চট্টগ্রাম নগরী জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে- সভা শেষে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ হিমালয়ের পাদদেশের একটি দেশ। এখানে পলি জমবে। অতিমাত্রায় বৃষ্টি হলে পানির প্রবাহও বাড়ে। ফলে এখানে জলাবদ্ধতা থাকবে। এটা যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, 'জলাবদ্ধতা নিরসনসহ চট্টগ্রামকে একটি সুন্দর নগরী হিসেবে নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। সেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা সেগুলো স্বচক্ষে দেখার জন্য আমি চট্টগ্রামে এসেছি। অনেক প্রকল্প ঘুরে দেখেছি। এগুলো বাস্তবায়ন যাতে সঠিকভাবে হয়, বাস্তবায়নকালীন কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত হলে সেগুলোর যাতে সমাধান করা যায়, এ জন্য বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে মেয়র এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি প্রতিমাসে একটি সভা করে এ প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে কাজ করবে।'
সভায় অংশ নেওয়ার আগে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে মহানগরী পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর পাড় লিজ দিয়ে কোনো শিল্পকারখানা নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির প্রাণ। চট্টগ্রাম শহরকে নিয়ে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।'
সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, অহেতুক একে অন্যের ওপর দোষারোপ করে সরকারের অর্জন ম্লান করার অধিকার কারও নেই। তিনি সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতাসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সভায় অংশ নেওয়া এক প্রকৌশলী জানান, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী নগরের ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় কয়েকটি খালে স্লুইসগেটের প্রশস্ততা সংকুচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। এতে পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতা হওয়ার কোনো শঙ্কা আছে কিনা তা জানতে চান। এ সময় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, নগরের টেকপাড়া, মরিময় বিবি ও কলাবাগিচা খালের দৈর্ঘ্য কম হওয়ার কারণে স্লুইসগেটের প্রশস্ততা কমেছে। তবে এই স্লুইসগেটের নকশা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ডিজাইন সেল থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষসহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ, একটি সিটি করপোরেশন এবং অন্যটির কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। রুদ্ধদ্বার এই সভায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালকরা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম ও অগ্রগতি উপস্থাপন করেন।