ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

শেরপুর সীমান্তে আরও এক মৃত হাতি

শেরপুর সীমান্তে আরও এক মৃত হাতি

কাউকে না জানিয়ে কয়েকজন হাতিটিকে গর্ত করে মাটিচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন- সমকাল

শেরপুর প্রতিনিধি ও নালিতাবাড়ী সংবাদদাতা

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২১ | ০৮:২৬ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২১ | ০৮:২৬

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ে খাবারের সন্ধানে আসা একটি বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার করেছেন বন বিভাগের কর্মীরা। শুক্রবার ভোরে উপজেলার পানিহাতা সীমান্তের মায়াঘাষি এলাকার ধানক্ষেত থেকে মৃহ হাতিটি উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে গারো পাহাড়ে আসা দুটি বন্য হাতির মৃত্যু হলো।

এর আগে গত ৯ নভেম্বর শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী রানিশিমূল ইউনিয়নের মালাকোচা গ্রামে বিদ্যুতের ফাঁদে ফেলে একটি পুরুষ হাতি হত্যা করা হয়।

শেরপুর বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শেরপুরের গারো পাহাড়ে আসা ২৬টি বন্য হাতি মারা গেছে।

বন বিভাগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে খাবারের সন্ধানে উপজেলার গারো পাহাড়ের পানিহাটা এলাকায় লোকালয়ে ফসলের ক্ষেতে হানা দিচ্ছিল এক পাল বন্য হাতি।

বন বিভাগের ওই বিটের দায়িত্বে থাকা ময়মনসিংহ সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মেজবাউল ইসলাম বলেন, শুক্রবার ভোরে পানিহাতা ও মায়াঘাষি গ্রামের মাঝের একটি ধানক্ষেতে মৃত হাতিটি পাওয়া যায়। মাদি হাতিটির বয়স আনুমানিক আড়াই থেকে তিন বছর। সুরতহালে হাতির শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে পেট বেশ ফোলা ছিল। প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরীক্ষার পর হাতিটির মৃত্যুর কারণ বলা যাবে।

নালিতাবাড়ী থানার এসআই মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয়রা তাকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে এক পাল হাতি ধানক্ষেতে হানা দেয়। সকালে মৃত অবস্থায় হাতিটি পাওয়া যায়।

পরিবেশবাদী সংগঠন বার্ড কনজারভেশন অব শেরপুরের সভাপতি সুজয় মালাকার বলেন, আমরা সকালে এসে দেখি কাউকে না জানিয়ে কয়েকজন হাতিটিকে গর্ত করে মাটিচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনিরুল খান বলেন, আমরা ভোরবেলায় ঘটনাস্থলে আসার পর দেখতে পাই মৃত হাতিটিকে মাটি চাপা দেওয়ার জন্য গর্ত করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে শুনেছি, বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে হাতিটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে বিদ্যুতের তার সরিয়ে ফেলা হয়। তিনি বলেন, এভাবে মরতে থাকলে হাতি নিঃশেষ হতে বেশি দেরি লাগবে না। বনের জায়গায় চাষবাস হওয়ার কথা নয়। এখানে বন থাকলে এ অবস্থা হতো না।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মো.মতিউর রহমান জানান, হাতিটি কী কারণে মারা গেছে তা এখনও জানা যায়নি। অতিরিক্ত ধান খাওয়ার কারণে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এটির মৃত্যু হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

মধুটিলা ইকোপার্ক রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, ৩০-৪০টির এক পাল হাতি বেশ কিছুদিন ধরে খাবারের সন্ধানে ধান ও সবজি ক্ষেতে হানা দিচ্ছিল। স্থানীয়রা রাতে মশাল জ্বালিয়ে, সার্চ লাইট দিয়ে তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করছিলেন।

ময়মনসিংহের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ কে এম রহুল আমিন বলেন, হাতি অত্যন্ত নিরীহ প্রাণী। আমরা চেষ্টা করছি যাতে হাতির কোনো ক্ষতি না হয়। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে ২০-২৫টি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা হয়েছে। তিনি বলেন, হাতিকে মেরে ফেললে আমরা কোনো ছাড় দেব না। মালাকোচা গ্রামে হাতির মৃত্যুর ঘটনায় ৪ জনের নামে মামলা হয়েছে। শুক্রবারের হাতির মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত হচ্ছে। তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গারো পাহাড়ে হাতি রক্ষার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন

×