তবুও শশিভূষণের স্মৃতির ভবন ভাঙতে তোড়জোড়

ছবি: সংগৃহীত।
খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২২ | ১০:৫৫ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২২ | ১০:৫৫
দেশের শিল্পকলার অন্যতম পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী শশীভূষণ পাল খুলনার মহেশ্বরপাশায় নিজ বাড়িতে ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহেশ্বরপাশা স্কুল অব ফাইন আর্টস নামে অঙ্কন বিদ্যাপীঠ। দেশের প্রথম অঙ্কনশিল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৪১ বছর অধ্যক্ষ ছিলেন শশীভূষণ।
১৯২৯ সালে নিজ বাড়িতেই নির্মাণ করা হয় বিদ্যালয়ের মূল ভবন। ১৯৮৩ সালে আর্ট স্কুলটি খুলনা শহরের গল্লামারী এলাকায় স্থানান্তর করে খুলনা আর্ট কলেজ এবং বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে খুলনা আর্ট ইনস্টিটিউট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
আর্ট স্কুলটির মূল ভবন এর পর থেকে ব্যবহার হচ্ছে শশীভূষণ শিশু বিদ্যানিকেতন হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়া শতবর্ষী ভবনটি সম্প্রতি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যালয় কমিটি। এ জন্য দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে।
প্রশাসনের এমন উদ্যোগে আন্দোলনে নেমেছেন খুলনার সংস্কৃতিপ্রেমীরা। সংস্কৃতির ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ভবনটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন তারা। ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন লেখক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীসহ ১৮ বিশিষ্টজন।
খুলনার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা জানান, ১৯৭৪ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও কবি জসীম উদ্দীন এ প্রতিষ্ঠানকে দেশের প্রথম অঙ্কন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দিয়েছিলেন।
বিদ্যালয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চুন-সুরকি আর ইটের গাঁথুনিতে তৈরি একতলা ভবনটি সংস্কারের অভাবে ভগ্ন অবস্থায় রয়েছে। চুন-সুরকি খসে পড়ছে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খুলনা নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সিটি করপোরেশন। ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট নগর ভবনে এক সভায় বিদ্যালয় ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওই সভায় ভবনটি ভেঙে ফেলতে প্রধান শিক্ষক নাহিদ সুলতানার কাছে চিঠি পাঠায় কেসিসি। ১৪ নভেম্বর বিদ্যালয় কমিটির মতবিনিময় সভায় পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম জানান, ভবনটি নিলামে বিক্রির জন্য ২১ ডিসেম্বর সংবাদপত্রে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ৪ জানুয়ারি ভবনটির দরপত্র জমার শেষ দিন ছিল। দরপত্র পড়েছে ছয়টি।
ইতিহাসের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক মাজহারুল হান্নান জানান, শশীভূষণ পালের এ স্থাপনাটি ইতিহাসের অংশ। এটি সংরক্ষণ করে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে হবে।
বিশিষ্টজনের প্রতিবাদ: ভবনটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের শিল্পজগতের ১৮ বিশিষ্টজন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে ভবন রক্ষার পাশাপাশি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে শশীভূষণ পাল চিত্রশিল্প জাদুঘর করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিবৃতি দেওয়া ১৮ বিশিষ্টজন হলেন- আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, সারওয়ার আলী, আবেদ খান, সেলিনা হোসেন, লায়লা হাসান, আবদুস সেলিম, মফিদুল হক, শফি আহমেদ, শাহরিয়ার কবির, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মুনতাসীর মামুন, সারা যাকের, শিমূল ইউসুফ ও গোলাম কুদ্দুছ।
এ ছাড়া ভবনটি সংরক্ষণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এ দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি, নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন, মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।