ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড

রক্ষকের আড়ালে তৈরি 'দুর্নীতির মৌচাক'

রক্ষকের আড়ালে তৈরি 'দুর্নীতির মৌচাক'

তৌফিকুল ইসলাম বাবর, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২২ | ১২:০০

শহিদুল ইসলাম। রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সিপাহি। ১৪ বছর ধরে কাজ করছেন বন্দরনগরীর হালিশহরের রেলের অন্যতম প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিডিওয়াই)। একই কর্মস্থলে প্রায় ৯ বছর ধরে থিতু আরেক সিপাহি মাহমুদুল হাসান। আর হাবিলদার নুরুল ইসলামেরও সেখানে হয়ে গেল সাড়ে সাত বছর। একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর থাকতে পেরে চাকরি জীবনে অন্যরকম 'সুখী' তারা। এ রকম 'সুখী' সিপাহি-হাবিলদার আছেন আরও অনেক।


একনাগাড়ে অবস্থানের সুযোগে তারা কর্মস্থলে গড়ে তুলেছেন 'দুর্নীতির মৌচাক'। তাদের নামে ইয়ার্ডে ট্যাঙ্কার ওয়াগন থেকে তেল চুরি, মাদক সম্পৃক্ততা, বিভিন্ন ট্রেন থেকে যন্ত্রাংশ বিক্রিসহ নানা অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে। এসব নিয়ে নালিশও গেছে বাহিনীপ্রধানের কাছে। এতকিছুর পরও তারা আছেন বহাল তবিয়তে। তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ।

শুধু সিজিপিওয়াই নয়, আরএনবির বিভিন্ন সার্কেলে নান অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন অন্য সদস্যরাও। বিশেষ করে রেলের বিভিন্ন ইয়ার্ড, কারখানা, গুদাম, গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন ও ট্রেনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আরএনবির কিছু সদস্য 'রক্ষকের বদলে ভক্ষক' বনে গেছেন, নিচ্ছেন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিজিপিওয়াইয়ের নিরাপত্তায় আরএনবি সদস্য রয়েছে ৯১ জন। একজন চিফ ইন্সপেক্টরের অধীনে কাজ করেন তারা। এর মধ্যে রয়েছেন একজন এএসআই, একজন এসআই, দু'জন নায়েক, ৯ জন হাবিলদার এবং বাকি ৫৬ জন সিপাহি।
সিজিপিওয়াইয়ের দায়িত্ব পাওয়া আরএনবির চিফ ইন্সপেক্টর (সিআই) আমানত উল্লাহ আমান গত ৫ ডিসেম্বর বাহিনীর বিভিন্ন পদের ১০ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি লেখেন বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ডেন্টের কাছে। এতে বাহিনীর হাবিলদার নুরুল ইসলাম, সিপাহি শহিদুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান ছাড়াও আরও সাতজনের 'কুকীর্তি' তুলে ধরা হয়। চিঠিতে রয়েছে হাবিলদার শফিকুল ইসলাম, সিপাহি জাহাঙ্গীর আলম, সিপাহি মাহফুজ আলম, সিপাহি অজয় দাশ, সিপাহি আবদুল মালেক, সিপাহি তারেক রহমান, সিপাহি অমল কাটি চাকমার নামও।
এর মধ্যে নায়েক মো. শফিকুল ইসলাম একই কর্মস্থলে রয়েছেন তিন বছরেরও বেশি সময়। একই কর্মস্থলে সাড়ে ৯ বছর কর্মরত সিপাহি মাহফুজ আলম। সিপাহি অজয় দাশ ছয় বছর, সিপাহি আবদুল মালেক প্রায় সাড়ে ৯ বছর, সিপাহি অমল কাটি চাকমা সাড়ে আট বছর ধরে এক কর্মস্থলেই আছেন। অন্যরাও বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে খুঁটি গেড়ে বসেছেন। যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি আরএনবির চিফ ইন্সপেক্টর (সিআই) আমানত উল্লাহ আমান।
সমকালের হাতে আসা ওই চিঠিতে দেখা যায়, অভিযুক্ত আরএনবি সদস্যদের বিরুদ্ধে তেল চুরি, মাদক সম্পৃক্ততা, ট্রেনের যন্ত্রাংশ চুরির মতো বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার কথা তুলে ধরা হয়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ওই চিঠি পাঠানোর প্রায় দুই মাস পার হলেও বাহিনীপ্রধান জহিরুল ইসলাম এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি। 

সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রহস্যজনক কারণে বাহিনীপ্রধান ব্যবস্থা না নেওয়ায় আরএনবির দুর্নীতিবাজ সদস্যরা হয়ে উঠছে আরও বেপরোয়া। তাদের মূল দায়িত্ব রেলসম্পদের নিরাপত্তা হলেও তাতে গাফিলতির কারণে বিভিন্ন স্থানে রেলের মালামাল চুরির ঘটনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ডেন্ট জহিরুল ইসলামকে। তবে আরএনবির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ডেন্ট মো. শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'রেলের চট্টগ্রাম বিভাগের অভ্যন্তরীণ সার্কেলগুলোতে আরএনবি সদস্যদের বদলির এখতিয়ার রয়েছে আমার। এক সার্কেল থেকে আরেক সার্কেলে বদলি করা যায়। সেটা আবার রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কোনো কোনো সময় কাউকে বদলি করা হলে দেখা যায়, তিনি তদবির করে সেটা আটকে দেন। তখন কিছু করার থাকে না।'
সূত্র জানায়, সিজিপিওয়াই হচ্ছে রেলর অন্যতম বড় একটি সম্পদ। বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের মালামাল ও জ্বালানি তেল এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব পায় রেলওয়ে।


আরও পড়ুন

×