ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সন্তানদের কবল থেকে বাঁচার আকুতি বৃদ্ধ শিল্পপতির

সন্তানদের কবল থেকে বাঁচার আকুতি বৃদ্ধ শিল্পপতির

ছবি: সমকাল

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ০৯:২৬ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১১:১৪

মো. সাইজুদ্দিন মিয়া। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রয়েছে তার দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। সত্তরোর্ধ্ব এ শিল্পপতি এখন তার ৯ সন্তানের নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের কবল থেকে মুক্ত হতে দ্বারে দ্বারে আকুতি জানাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন। শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আবেদন জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সাইজুদ্দিন জানান, তার সন্তানরা ভাড়া করা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে হামলা চালিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর, তার দ্বিতীয় স্ত্রী গুলনাহার আক্তার আঁখির হাত এবং ছেলে আতিকুল ইসলাম শান্তর পা ভেঙে ফেলে। এ ছাড়া বাসার কাজের মেয়ে শাহিনুর আক্তারকে মারধরের কারণে তার বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায়। মারধরের পর তাদের একঘরে বন্দি করে রাখে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। প্রাণে বাঁচতে বর্তমানে তিনি রূপগঞ্জের নিজ বাড়িতে না থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে আছেন।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম শাহেদ সমকালকে বলেন, জাতীয় জরুরি সেবার ফোন পেয়ে শিল্পপতি দম্পতিকে উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি পারিবারিক হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

রূপগঞ্জের ইউএনও শাহ নুসরাত জাহান সমকালকে বলেন, 'শিল্পপতি সাইজুদ্দিন পুলিশের সাহায্যে মুক্ত হওয়ার পর আমার কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। আমি তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিই।'

সাইজুদ্দিন মিয়া অসুস্থ থাকায় সংবাদ সম্মেলনে তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গুলনাহার আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রয়াত প্রথম স্ত্রীর তিন ছেলে ও ছয় মেয়ে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য মারধর করে।

শিল্পপতি সাইজুদ্দিন মিয়ার প্রথম স্ত্রী মারা যান ১৯৮৮ সালে। ১৯৯১ সালে তিনি আঁখিকে বিয়ে করেন। এ সংসারে তার একটি ছেলে রয়েছে। রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকায় তার 'সাইজুদ্দিন ও শান্ত টেপটাইল' নামে দুটি কারখানা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি প্রথম পক্ষের সন্তানদের লিখে দিতে বারবার সাইজুদ্দিন মিয়াকে হুমকি ও চাপ দেওয়া হচ্ছিল। এ জন্য গত বছরের ৮ ডিসেম্বর তিনি আদালতে মামলা করেন। মামলা করে বাসায় ফেরার পরই প্রথম পক্ষের তিন ছেলে রফিকুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম বাবু, শাহজাহান মিয়া, মেয়ে রাহিমা আক্তার ও শাহারা আক্তার ডেইজী এবং তিন ছেলের স্ত্রী একদল সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালায়।

সাইজুদ্দিন মিয়ার ভাষ্য, নিরাপত্তার কারণে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করতে না পেরে এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করেন। কিন্তু মামলাটি যথাযথ তদন্ত না করেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ফলে হামলাকারীরা দ্রুত জামিন পেয়ে যায়।

অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছেন সাইজুদ্দিন মিয়া। আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

সাইজুদ্দিন মিয়া অভিযোগ করেন, তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে প্রথম পক্ষের সন্তানরা ঘরে থাকা সিন্দুক ভেঙে দলিলপত্র, এনআইডি কার্ড এবং ব্যাংকের চেকবইসহ জরুরি কাগজপত্র নিয়ে যায়। এমনকি দুই মিলে উৎপাদিত দুই কোটি টাকা মূল্যের কাপড় বাজারে মাত্র এক কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে অবাধ্য ওই সন্তানদের কব্জায় তার দুটি মিলসহ স্থাবর সম্পত্তিগুলো রয়েছে।

সাইজুদ্দিন মিয়া আরও বলেন, প্রথম পক্ষের সন্তানরা সম্পত্তি বাটোয়ারা করতে কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলির দ্বারস্থ হয়। তিনি কলিকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, জানুয়ারিতে বাটোয়ারা করে দেবেন। কিন্তু তার আগেই ডিসেম্বর মাসে তাদের ওপর হামলা করে।

বাবার ওপর হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে সাইজুদ্দিন মিয়ার বড় ছেলে রফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন।

ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাইজুদ্দিন মিয়ার প্রথম পক্ষের সন্তানরা ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে দিয়ে শুধু টাকা ওড়ায়। তারা বাবার ব্যবসা দেখাশোনা বা কোনো সহায়তা করে না। এ কারণে সাইজুদ্দিন মিয়ার রাগ ছিল। তার প্রথম পক্ষের সন্তানরা শুধু টাকা-পয়সা নষ্ট করে গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার এসআই ও সাইজুদ্দিন মিয়ার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সিরাজ বলেন, আমি মামলাটি তদন্ত করে গত মাসেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি।

কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলি বলেন, সাইজুদ্দিন মিয়ার প্রথম পক্ষের সন্তানরা বাবার কাছ থেকে সম্পদ পেতে আমার দ্বারস্থ হয়েছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে আমি বিষয়টি নিয়ে সাইজুদ্দিন মিয়ার সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিষয়টির সুরাহা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার প্রথম পক্ষের সন্তানরা একটি মাস সময় অপেক্ষা করতে পারেনি। তার আগেই তারা বাবার ওপর হামলা করে বসে। ঘটনাটি দুঃখজনক।

আরও পড়ুন

×