মুক্তিপণ চাওয়ার পরদিনই লাশ মিলল ২ নৈশপ্রহরীর

নিহতের স্বজনদের আহাজারি- সমকাল
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ০৯:৪৩ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ০৯:৪৩
বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীর একটি কারখানার দুই নৈশপ্রহরী খুন হয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে 'মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজ' নামে ওই কারখানার সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আব্দুল হান্নান (৪৫) সদর উপজেলার নামুজা বড়সরলপুর গ্রামের আব্দুল জোব্বারের ছেলে এবং শামছুল হক শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান প্রতাপপুরের মৃত হাসু আলীর ছেলে। এর আগে বৃহস্পতিবার তাদের মুক্তির দাবিতে পাঁচ লাখ চাওয়া হয়েছিল। এর আগের দিন কর্মস্থলে যাওয়ার পর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন।
মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজ কারখানাটি হস্তচালিত নলকূপসহ কৃষি সরঞ্জাম উৎপাদন করে।
নিহতদের স্বজনের অভিযোগ, আব্দুল হান্নান ও শামছুল হক কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য গত বুধবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তি পরদিন বৃহস্পতিবার আব্দুল হান্নানের মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীর কাছে এসএমএস পাঠিয়ে দু'জনকে অপহরণের কথা জানায়। মুক্তিপণ হিসেবে টাকাও দাবি করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আব্দুল হান্নান ও শামছুল হকের সন্ধানে তারা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছিলেন।
ওই কারখানার অন্যতম পরিচালক আলীমুর রাজীব বলেন, আব্দুল হান্নান ও শামছুল হক বুধবার রাতে যথারীতি কারখানায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তারা কেউ বাড়ি ফিরে যাননি বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এক পর্যায়ে আব্দুল হান্নানের স্ত্রী হীরা জানান, তার স্বামীর মোবাইল ফোন থেকে কেউ একজন দুই নৈশপ্রহরীকে অপহরণের কথা বলে মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। আলীমুর রাজীব আরও বলেন, দুই নৈশপ্রহরী নিখোঁজ থাকার খবরে তারা বৃহস্পতিবার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখেন এবং পুরো বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়।
ওই কারখানার আরেক পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, দুই নৈশপ্রহরীর সন্ধানে বৃহস্পতিবার তারা কারখানার অভ্যন্তরে খোঁজাখুঁজি করেন। পরদিন দুপুরের আগে নতুন করে খোঁজাখুঁজির সময় কারখানার ভেতরে উত্তর দিকে সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
লাশ দুটির গলায় গামছা প্যাঁচানো ছিল। সেখানে কথা হয় নিহত শামছুল হকের ভায়রা আনিছার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, শামছুল হক প্রতিদিন বিকেলে বাড়ি থেকে বের হতেন এবং রাতে দায়িত্ব পালন শেষে সকালে আবার বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু বুধবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি।
আনিছার রহমান আরও বলেন, অপহরণকারীরা নৈশপ্রহরী আব্দুল হান্নানের স্ত্রী হীরা খাতুনকে এও বলে, তোমাদের টাকা দিতে হবে না। মালিকপক্ষই দেবে। হীরা খাতুন ঘটনাস্থলে এসে বিলাপ করতে থাকেন। তখন তার সঙ্গে থাকা স্বজনরা বলতে থাকেন, হত্যাকারীরা এই কারখানার ভেতরেই রয়েছে।
ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সুজন মিয়া বলেন, ‘আব্দুল হান্নানের যে নম্বর থেকে তাকে অপহরণের কথা বলা হচ্ছিল, সেটি একেক সময় একেক স্থান দেখাচ্ছিল। তিনি বলেন, আমরা স্থানগুলোতে অভিযানও শুরু করেছিলাম। এমনকি বৃহস্পতিবার কারখানার ভেতরেও খোঁজ করেছিলাম। কিন্তু যে স্থানে লাশ দুটি পাওয়া গেছে, সেখানে আমাদের যাওয়া হয়নি।’ কীভাবে দু'জনকে হত্যা করা হয় সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
বগুড়া সদর থানার ওসি (তদন্ত) জাহিদুল হক বলেন, হত্যার রহস্য জানার চেষ্টা করছি। তদন্ত চলছে।
- বিষয় :
- বগুড়া
- নৈশপ্রহরী
- নৈশপ্রহরী খুন
- লাশ উদ্ধার