মায়ের বুকের ওপর বসে মাথা চেপে ধরে মেয়ে, ছুরি চালায় ভাড়াটে খুনি

অভিযুক্ত শেফালী আক্তার ও সোহেল রানা
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২২ | ০৯:৩৫ | আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২২ | ০৯:৩৫
চাচার বাসায় বেড়ানোর কথা বলে বৃদ্ধা মা মিনারা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় শেফালী আক্তার। মাকে খুন করার জন্য এর আগেই সোহেল রানা নামে এক যুবকের সঙ্গে এক লাখ টাকার চুক্তি করেন শেফালী। বাড়ি থেকে মিনারাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় জনমানবশূন্য এক স্থানে। নেওয়ার পথেই তাকে পানীয়র সঙ্গে খাওয়ানো হয় ঘুমের ওষুধ। এতে তার শরীর নিস্তেজ হতে থাকে। এক পর্যায়ে শেফালী তার মায়ের মাথায় আঘাত করে। এতে তিনি লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। পরে শেফালী তার মায়ের বুকের ওপর বসে মাথা চেপে ধরে আর ভাড়াটে খুনি সোহেল রানা ছুরি চালায় গলায়।
শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের ভিটিপাড়া এলাকায় সম্প্রতি ওই নারীকে খুনের ঘটনার বর্ণনা এভাবেই আদালতে দিয়েছে দুই ঘাতক।
শুক্রবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন জানান, ঘটনার ২০ দিনের মাথায় গত বুধবার শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া এলাকা থেকে দু'জনকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আদালতকে শেফালী জানায়, ১২ শতাংশ জমি ও ২টি গরু আত্মসাৎ করার জন্যই বিধবা মাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
পুলিশ জানায়, সেই নির্জন জায়গাতেই মায়ের লাশ ফেলে রেখে পাশের একটি দিঘির জলে রক্তমাখা হাত ধুয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় শেফালী। পরদিন বাড়িতে এসে সে সবাইকে জানায়, কুমিল্লা এলাকায় তার মাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সেখানে চলে গেছেন। এই বৃদ্ধা বয়সে তাকে বিয়ে দেওয়ার বিষয়টিতে সন্দেহ হয় সবার।
শেফালী জন্মগ্রহণের ৫-৬ বছর পর মিনারা তার স্বামীকে হারান। একমাত্র সন্তান শেফালীর সুখের জন্য আর সংসারই গড়েননি তিনি। স্বামীর রেখে যাওয়া ১২ শতাংশ জমিতে ঘর তৈরি করে বসবাস করতে থাকেন। শেফালীকে বছর বিশেক আগে বিয়ে দেওয়া হয়। তার তিনটি সন্তানও রয়েছে। পুলিশ জানায়, এরই মধ্যে মিনারার এক ভাই একটি হত্যা মামলায় আসামি হয়। নিজের দুটি গরু বিক্রি করে মামলা পরিচালনার জন্য ভাইকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন মিনারা। আর এটাই কাল হয় তার। গরু বিক্রি করে টাকা না দেওয়ার জন্য মাকে নিষেধ করে শেফালী। এ নিয়ে মা-মেয়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। এক পর্যায়ে মায়ের ওই সম্পত্তি ও গরুগুলো নিজের দখলে নিতেই হত্যার পরিকল্পনা করে সে।
হত্যার পরদিন বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বরমীর মান্নানের টেক এলাকায় একটি ঝোপে পাওয়া যায় মিনারার লাশ। গলাকাটা এ লাশ শনাক্ত করতে না পারায় পুলিশ পরিচয় চেয়ে পোস্টার এঁটে দেয় দেয়ালে দেয়ালে।
সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর বলেন, অজ্ঞাতপরিচয়ের ওই লাশ শনাক্তের পর রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে শ্রীপুর থানা পুলিশ। ঘটনার ২০ দিনের মাথায় ক্লুলেস এ হত্যা মামলার রহস্য বের করে আনে পুলিশ।
- বিষয় :
- মাতে হত্যা
- ভাড়াটে খুনি
- গাজীপুর
- মায়ের লাশ