ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ধ্রুপদি

ধ্রুপদি

.

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০০:৩৭ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১২:০৬

বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা
শামসুর রাহমান

নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জ্বলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।
মমতা নামের পুত প্রদেশের শ্যামলিমা
তোমাকে নিবিড় ঘিরে রয় সর্বদাই।
কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে শিউলী-শৈশবে
‘পাখি সব করে রব’ বলে মদনমোহন তর্কালঙ্কার
কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক।
তুমি আর আমি অবিচ্ছিন্ন পরস্পর মমতায় লীন,
ঘুরেছি কাননে তাঁর নেচে নেচে, যেখানে কুসুমকলি সবই ফোটে
জোটে অলি ঋতুর সংকেতে।
আজন্ম আমার সাথী তুমি,
আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গড়ে পলে পলে,
তাইতো ত্রিলোক আজ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভেড়ে আমারই বন্দরে।
গলিত কাচের মতো জলে ফাৎনা দেখে দেখে
রঙিন মাছের আশায় ছিপ ধরে কেটে গেছে বেলা।
মনে পড়ে, কাঁচি দিয়ে নক্সা কাটা কাগজ এবং বোতলের ছিপি ফেলে
সেই কবে আমি ‘হাসি খুশি’র খেয়া বেয়ে
পৌঁছে গেছি রত্নদ্বীপে কম্পাস বিহনে।
তুমি আসো আমার ঘুমের বাগানেও
সে কোন বিশাল গাছের কোটর থেকে লাফাতে লাফাতে
নেমে আসো, আসো কাঠবিড়ালীর রূপে, ফুল্ল মেঘমালা থেকে
চকিতে ঝাঁপিয়ে পড়ো ঐরাবত সেজে,
 

 

একুশের কবিতা
আল মাহমুদ

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?
বরকতের রক্ত।

হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে!

প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।

চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে?
পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।

প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।
l‘পাখির কাছে, ফুলের কাছে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে
 

 

বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা
সুদূর পাঠশালার একান্নটি সতত সবুজ মুখের মতোই
দুলে দুলে ওঠো বারবার কিংবা টুকটুকে লঙ্কা-ঠোঁট টিয়ে হয়ে
কেমন দুলিয়ে দাও স্বপ্নময়তায় চৈতন্যের দাঁড়।
আমার এ অক্ষিগোলকের মধ্যে তুমি আঁখিতারা।
যুদ্ধের আগুনে, মারীর তাণ্ডবে
প্রবল বর্ষায় কি অনাবৃষ্টিতে
বারবণিতার নূপুর নিক্বনে
বণিতার শান্ত বাহুর বন্ধনে
ঘৃণায় ধিক্কারে, নৈরাজ্যের এলো– 
ধাবাড়ি চিৎকারে
সৃষ্টির ফাল্গুনে, হে আমার আঁখিতারা
তুমি উন্মীলিত সর্বক্ষণ জাগরণে।
তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে কী থাকে আমার?
উনিশ শো’ বাহান্নোর কতিপয় তরুণের খুনের পুষ্পাঞ্জলি
বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী। সে ফুলের একটি পাপড়িও আজ
ছিঁড়ে নিতে দেব না কাউকে।
এখন তোমাকে ঘিরে ইতর বেলেল্লাপনা চলছে বেদম।
এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি
এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউরের পৌষ মাস।
তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো,
বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।
lকাব্য : নিজ বাসভূমে; প্রথম প্রকাশ ১৯৬৯

আরও পড়ুন

×