উদ্ভিদ
নাম তার মে ফ্লাওয়ার

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে ফুটেছে মে ফ্লাওয়ার
মৃত্যুঞ্জয় রায়
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫ | ০১:৩১ | আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ | ০৮:২৮
মে ফ্লাওয়ার যে ফুলের নাম হতে পারে, সেটা ভাবিনি। অথচ এ দেশেই এমন একটি ফুল আছে, যেটা মে মাসে ফোটে। পঞ্জিকার পাতা না দেখে বাগানে সে ফুল দেখে বোঝা যায়, মে মাস চলছে। খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, মে ফ্লাওয়ার শুধু আমাদের দেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও আছে। যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ পাপড়ির সাদা গ্রাউন্ড লরেল (Epigaea regens) ফুলকে বলে মে ফ্লাওয়ার। ম্যাসাচুসেটসে কেউ যদি সে ফুলের গাছ তুলে ফেলে, তবে তাকে ৫০ ডলার জরিমানা দিতে হয়।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের মে ফ্লাওয়ার বিরাট বৃক্ষ। হাউথর্ন (Crataegus monogyna) নামের সে গাছটি সেখানকার লোকদের কাছে মে ফ্লাওয়ার নামে পরিচিত। এ দুটি গাছে মে মাসে ফুল ফোটে বলে সেসব দেশে এটি মে ফ্লাওয়ার নামে পরিচিত।
এসব গাছ আমাদের দেশে নেই। তবে আমাদের দেশে বল লিলি বা ফুটবল লিলি ফুলকে ডাকা হয় মে ফ্লাওয়ার নামে। এ ফুলের সুন্দর দুটি বাংলা নাম আছে– গোলকমণি ও অগ্নিগোলক। কেউ কেউ বলেন বল ফুল। মে মাসের শেষদিকে ঢাকায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখলাম, পশ্চিম দিকে একটি কেয়ারিতে একসারি গোলকমণি গাছ। প্রতিটি গাছেই ফুল ফুটে জায়গাটা আলো করে ফেলেছে। লম্বা শক্ত সবুজ ডাঁটির মাথায় ফুটবলের মতো গোল খোঁপায় ফুটে রয়েছে ফিকে লাল রঙের অসংখ্য ফুল। দেখতে অনেকটা কদম ফোয়ারার মতো লাগছিল।
গোলকমণি একটি কন্দজ বর্ষজীবী বীরুৎজাতীয় উদ্ভিদ। এর বর্তমান উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Scadoxus multiflorus. ফরাসি গণিতবিদ কনস্ট্যান্টাইন স্যামুয়েল রাফিনেস্কু (১৭৮৩-১৮৪০) ১৮৩৮ সালে এই গণের নামকরণ করেন। আগে প্রজাতিগত নাম ছিল Haemanthus multiflorus, গোত্র অ্যামারিলিডেসি। ২০০৪ সালে এর ডিএনএ ও উদ্ভিদ জাতি-জনি বিশ্লেষণ করে স্ক্যাডক্সাস ও হেমান্থাস গণ দুটির মধ্যে নিকট সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ায় হেমান্থাস গণকে স্ক্যাডক্সাস গণের সঙ্গে একীভূত করা হয়। এ গণে এ দেশে দুটি প্রজাতির গাছ দেখা যায়।
এ গাছকে বাগানে ও টবে শোভাময়ী উদ্ভিদ হিসেবে লাগানো হয়। গাছের গোড়ায় মাটির নিচে পেঁয়াজের মতো কন্দ বা রাইজোম গঠিত হয়, যা এক ধরনের রূপান্তরিত কাণ্ড। মৌসুমে প্রথম বৃষ্টির পর সেই কন্দ থেকে পুষ্পদণ্ড ও পাতা বের হয়। পাতা বড়, ডাঁটি লম্বা। কখনও কখনও পাতা ও পুষ্পদণ্ড একসঙ্গে বের হয়। তবে সাধারণত পাতা বের হওয়ার আগেই পুষ্পমঞ্জরি বের হয় ও ফুল ফোটে। শক্ত ও খাড়া পুষ্পদণ্ডের মাথায় গোল বলের মতো পুষ্পমঞ্জরিতে ২০০টির মতো ফুল ফোটে। সাধারণত মে মাসেই ফুল ফোটে।
শীতের সময় গাছ মরে শুকিয়ে যায়; কিন্তু মাটির নিচে কন্দ বেঁচে থাকে। বসন্ত-গ্রীষ্মে সেই কন্দ থেকে পাতা ও পুষ্পদণ্ড বের হয়। এ উদ্ভিদের আদি নিবাস উপ-সাহারা আফ্রিকা অঞ্চল। এ দেশে অনেক বাড়িতে ও উদ্যানে এ গাছ দেখা যায়। বলধা উদ্যানেও আছে। গাছটি চাষ করা সহজ, তেমন যত্ন নিতে হয় না। ফুল ফোটার পর কয়েকদিন ধরে তার শোভা ছড়ায় বলে অনেকের কাছে এ গাছ প্রিয়।
- বিষয় :
- ফুলচাষি