ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

অস্থিরতার দ্রুত অবসান চান বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা

অস্থিরতার দ্রুত অবসান চান বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা

কোলাজ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০৩:৩১

সাম্প্রতিক সময়ে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের পোশাক কারখানাতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।

সংগঠনটির দাবি, পোশাক ও বস্ত্র খাতের ক্রয়াদেশ অন্য দেশে নেওয়ার পাঁয়তারা হিসেবে এ ষড়যন্ত্র চলছে। বিটিএমএ এই অস্থিরতার দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 

গতকাল বুধবার রাজধানীর পান্থপথে ইউটিসি ভবনে বিটিএমএর বোর্ডসভার আগে টেক্সটাইল শিল্প খাতের পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, শত অসুবিধা সত্ত্বেও বস্ত্রকল মালিকরা সময়মতো শ্রমিককদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছেন। কিন্তু এখন বস্ত্র ও পোশাক খাত ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে গেছে। কারখানাগুলোর সামনে ৫০ থেকে ১০০ জনের বহিরাগত দল এসে উত্তেজনা তৈরি করছে। 

দেশের বস্ত্র খাত নিয়ে বিদেশে ভাবমূর্তি খুবই খারাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্রুত পরিস্থিতি ঠিক করতে না পারলে আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রয়াদেশ চলে যাচ্ছে পাশের দেশগুলোতে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। সরকারকে এ খাতে গুরুত্ব দিতে হবে।

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, আমাদের দেশের কর্মীরা খুবই শান্তিপ্রিয়। যেসব খাতে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়, তার সুবিধা শ্রমিক-মালিক সবাই পান। যেসব খাত প্রণোদনা পাওয়ার দাবিদার তাদেরই প্রণোদনা দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান তিনি।

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পক্ষ থেকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির যে তথ্য দেওয়া হয়, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। এভাবে এলডিসি উত্তরণ করা যাবে না। এলডিসি উত্তরণের জন্য বিষয়টি পুনর্বিবেচনা দরকার। 

বিটিএমএর পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে বেশ অস্থিরতা চলছে। কিছু লোক কারখানা ভাঙতে আসে। কিন্তু এলাকার কেউ তাদের চেনে না। এরা কারা? এসবের পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে। উদ্যোক্তাদের কাছে এর প্রমাণও রয়েছে। 

তিনি বলেন, স্থানীয় ঝুট ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ কারখানাগুলোর সামনে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ইন্ধন দিচ্ছে। এর আগে ২০০৬ সালেও দেশের কারখানাগুলোয় অস্থিরতা তৈরি করা হয় বিদেশি ষড়যন্ত্রে। এখন আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

বস্ত্রকল মালিকরা বলেন, বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের এজেন্টরা কারখানাগুলোতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও আগুন লাগানোর পেছনে জড়িত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আইডি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে ভাঙচুর শুরু করা হয়। দেখা যাচ্ছে, একই ধরনের লাঠি ও হ্যামার হাতে একটি গ্রুপ কারখানায় ভাঙচুর করছে। এদের কাউকেই স্থানীয় মানুষ এবং কারখানার শ্রমিকরা চেনেন না। এরাই হলো বিদেশি এজেন্টদের লোক। কারণ কারখানায় অসন্তোষ দেখা দিলেও শ্রমিকরা কখনই কারখানার মেশিন ভাঙচুর করেন না। কিন্তু এই অচেনা দাঙ্গা-হাঙ্গামাকারীদের উদ্দেশ্যই থাকে কারখানার মেশিন ভাঙচুর।

অবৈধভাবে সুতা আমদানি হচ্ছে দাবি করে বস্ত্রকল মালিকরা বলেন, ১০০ টন সুতার এলসি খুলে আমদানি করা হয় ২০০ টন। এভাবে প্রতিনিয়ত শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সুতা আমদানি হচ্ছে। অথচ দেশের মিলে উৎপাদন করা সুতা বিক্রি হয় না। তাই স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি আপাতত বন্ধ রাখা দরকার। 

তারা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লেও ঠিকমতো গ্যাস থাকে না। ডিজেল দিয়ে কোনো রকমে কারখানা চলছে। উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে কর্মকর্তাদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হয়। প্রায় এক মাস ধরে অনেক কারখানা বন্ধ। উৎপাদন না হলে বেতন দেবে কীভাবে! আর্থিক খাতে এখনও ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা চলছে। যারা লুটপাট করে নিয়েছে তাদের কারণে ভালো উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। পদে পদে তারা হয়রানি, ঘুষ, দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। সরকার বস্ত্র ও পোশাকশিল্পকে কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে চিন্তা করলে সহজেই এ খাতের সমাধান হয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএর সহসভাপতি আবুল কালাম, শামীম ইসলাম, সালেউদ জামান খান, পরিচালক মোশারফ হোসেন, আজাহার খান, এম সোলায়মান, বিএম শোয়েব, মো. মনির হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মতিউর রহমান, রাজিব হায়দার প্রমুখ।

আরও পড়ুন

×