ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ছিনতাইয়ের পর মুহূর্তেই হাতবদল মোবাইল ফোন

ছিনতাইয়ের পর মুহূর্তেই হাতবদল মোবাইল ফোন

ছবি - সংগৃহীত

ইন্দ্রজিৎ সরকার

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২২ | ২৩:৫২

মোবাইল ফোন চুরি ও ছিনতাই কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। দিনদুপুরে ব্যস্ত সড়কে যানবাহনের জানালা থেকে থাবা দিয়ে ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি নিরিবিলি সড়কে অস্ত্রের মুখে পথচারী বা রিকশা আরোহীর কাছ থেকেও ছিনতাই হচ্ছে। ছিনতাইয়ে বাধা দিলে খুন করতেও পিছপা হচ্ছে না দুর্বৃত্তরা। সর্বশেষ গত রোববার ভোরে রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ায় দন্ত চিকিৎসক বুলবুল আহমেদকে ছুরিকাঘাত করে তার মোবাইল ফোন ছিনতাই করা হয়। পরে তার মৃত্যু হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে লুণ্ঠিত ফোনগুলোর ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নম্বর বদলে ফেলা হয়। একই সঙ্গে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তনের ফলে ফোনটি নতুনের মতো দেখায়। এরপর তা কম দামে বিক্রি হয় সেকেন্ডহ্যান্ড মোবাইলের দোকানে। আইএমইআই নম্বর বদলে ফেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে ফোনগুলো খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। অপরাধী চক্রও থেকে যায় আড়ালে। অবশ্য চলতি মাসে এমন অন্তত তিনটি চক্র ধরা পড়েছে, উদ্ধার হয়েছে ৮৯টি মোবাইল ফোন। সম্প্রতি রাজধানীর পল্টন এলাকায় গ্রেপ্তার একটি চক্রের সদস্যরা জানিয়েছে, প্রতিদিন তারা পাঁচ-সাতটি ফোন ছিনতাই করে। সেই হিসাবে বছরে অন্তত এক হাজার ৮০০ ফোন ছিনতাই করে শুধু এই একটি চক্র। ওই চক্রটির সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে টিপু সুলতান।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম সমকালকে বলেন, টিপু একসময় ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাই করত। তিন বছর আগে সে ছিনতাই ছেড়ে দেয়, বেছে নেয় নতুন কৌশল। পরিচিত ছিনতাইকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। তারা মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের পরপরই টিপুর কাছে তা হস্তান্তর করে।

ডিবির এই কর্মকর্তা জানান, ঢাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি কিছু মোবাইল ফোন চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বিশেষ অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। অভিযানে কিছু ছিনতাইকারী ধরা পড়ে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর থেকে ধরা হয় একটি চক্রকে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে চুরি-ছিনতাই হওয়া ফোনগুলো কীভাবে হাতবদল হয় এবং শেষ ধাপে কোথায় যায় সে ব্যাপারে অনুসন্ধান করা হয়। এ পর্যায়ে টিপুকে শনাক্ত করে ডিবি। সে ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন সংগ্রহ থেকে শুরু করে নানা প্রক্রিয়ার পর তা বিক্রির বিষয়টি সমন্বয় করে আসছিল।

ডিবি সূত্র জানায়, টিপু সুলতান মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে থাকত। ছোটবেলা থেকেই সে নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এজন্য একাধিকবার তাকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়। পরে সে অপরাধ জগৎ থেকে সরে আসার নামে নতুন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে ফোন সংগ্রহ করার পর তা পৌঁছে দেয় পরিচিত অসাধু টেকনিশিয়ানদের হাতে। তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর বদলে ফেলে। ছিনতাই করতে গিয়ে অনেক সময় ফোনের স্ট্ক্রিনে আঁচড় পড়ে বা ফেটে যায়। সেগুলো মেরামত করা হয়। নতুন গ্লাস প্রোটেক্টর লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে এগুলো সরবরাহ করা হয় ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেট, মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্প ও সাভারের রাজ্জাক মার্কেট এলাকার কিছু দোকান ও ব্যক্তির কাছে। এসব ফোনের দাম হয় অস্বাভাবিক কম। যেমন স্যামসাং এস ২১ আল্ট্রা মডেলের একটি ফোনের দাম এক লাখ ৩৯ হাজার টাকা। তবে ছিনতাই করা এমন একটি সেট তারা বিক্রি করেছে মাত্র ১৫ হাজার টাকায়। এজন্য এই ধরনের ফোনগুলোর বেশ চাহিদা রয়েছে সেকেন্ডহ্যান্ড বাজারে।

তদন্তসংশ্নিষ্টরা জানান, টিপুর সংশ্নিষ্টতা নিশ্চিত হওয়ার পর ২৪ মার্চ পল্টনের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকা থেকে তাকেসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম। গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলো- রফিক মিয়া, রুবেল মোল্লা ও সাগর হোসেন। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১৬টি ফোন উদ্ধার করা হয়। এর আগে ১৫ মার্চ গুলিস্তান থেকে ৩০টি লুণ্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে ডিবির ওয়ারী বিভাগ। তখন জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো- মো. কামাল, মো. মামুন ও জালাল সিকদার।

মোবাইল ফোন চুরি ও ছিনতাইয়ে জড়িত আরেকটি চক্রের দুই সদস্যকে ২১ মার্চ গ্রেপ্তার করে মিরপুর থানা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ৪৩টি ফোন উদ্ধার করা হয়। মিরপুর থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান জানান, চুরি-ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন কম দামে কিনত গ্রেপ্তারকৃত আব্বাস আলী। পরে সেগুলোর কিছুটা পরিবর্তন করে বিক্রি করা হতো।

আরও পড়ুন

×