গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান
পরিকল্পনা কমিশনের পরিকল্পনা উঠে গেছে

অধ্যাপক রেহমান সোবহানের স্মৃতিকথা বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান। শনিবার সিপিডি কার্যালয়ে - সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২২ | ১৫:০৯
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, পরিকল্পনা কমিশনের পরিকল্পনা উঠে গেছে। এখন সিস্টেমের মধ্যে চলে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্প করা কিংবা পরিকল্পনা করার মধ্যেই সীমিত থাকছে। বাইরে থেকে পরামর্শক নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরকারের নীতি প্রণয়নে পরিকল্পনা কমিশনের এখন আর কোনো প্রভাব নেই।
আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'আনট্রাঙ্কুয়িল রিকালেকশনস :পলিটিক্যাল ইকোনমি অব নেশন বিল্ডিং ইন পোস্ট লিবারেশন বাংলাদেশ' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থার কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক রেহমান সোবহানের স্ত্রী এবং সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান। রেহমান সোবহান বলেন, স্বাধীনতার আগে ব্যাংক-বীমা, এমনকি বায়তুল মোকাররমের একটা ছোট দোকানও ছিল পাকিস্তানিদের হাতে। দেশ পরিচালনার সব সিদ্ধান্ত হতো পাকিস্তানে। সেখানে বাঙালি কেউ ছিল না। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ একটা কলোনি থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হলো। পাকিস্তানিরা সব লাপাত্তা। ব্যবসা-বাণিজ্য, এমনকি দোকানপাট চলছে না। সে অবস্থায় ধ্বংসস্তূপের ওপর থেকে জাতি গঠন, সারাবিশ্বের স্বীকৃতি আদায় ও অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করা- এগুলো অনেক কঠিন কাজ ছিল। সে সময় সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। সরকারের নানান নীতি প্রণয়ন করতে হয়েছে। নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে স্বর্গ-নরকের ব্যবধান থাকে। সে সময় সব পরিকল্পনার ওপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার হত্যাকাণ্ডের পর সে ধারায় ছেদ পড়ে। রেহমান সোবহান বলেন, এখনও সরকারের নীতি নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়, তবে বাস্তবায়ন নিয়ে কম কথাই শোনা যায়।
অনুষ্ঠানে গ্রন্থের ওপর আলোচনা করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অর্থনীতির ভিত্তির এক অনন্য উপস্থাপনা রয়েছে রেহমান সোবহানের এ বইটিতে। তিনি বলেন, রেহমান সোবহান কেবল একজন পেশাদার অর্থনীতিবিদই নন, দেশ, সরকার ও জাতি গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বইটিতে কেবল বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তিই নয়; একই সঙ্গে রাজনৈতিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
আলোচনায় সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান বলেন, মুজিবনগর সরকার, পরিকল্পনা কমিশন গঠনে বড় ভূমিকা পালন করেছেন রেহমান সোবহান। প্রজন্মের জ্ঞান ও প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন তিনি। সাইদুজ্জামান বলেন, রেহমান সোবহান বয়সে দুই বছরের ছোট হলেও তার কাছ থেকে তিনি অনেক কিছুই শিখেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আবদুল বায়েস বলেন, কর্মজীবনে রাজনৈতিক অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করেছেন ড. রেহমান সোবহান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে আড়াই বছর পরিকল্পনা কমিশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। রাজনীতিতে যোগদানের আগ্রহ ছিল তার। তবে ভাষা ঠিকমতো বলতে পারেননি তিনি। এটাই ছিল বড় বাধা। এ গ্রন্থে সে কথা স্বীকারও করেছেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। ১৬তম চ্যাপ্টারে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করা হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু এ ধরনের উন্নয়ন চাননি- সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসন শুরু হয় এবং এর মধ্য দিয়ে জাতীয় উন্নয়নে স্বরূপ ভেঙে চুরমার হয়। জাতীয় চিন্তার বিকাশ থমকে যায়। বিকশিত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয় জাতি। সে বিষয়গুলোও রয়েছে রেহমান সোবহানের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থটিতে। গল্পের মধ্য দিয়ে অনেক কিছুই প্রকাশ করেছেন তিনি।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহামান বলেন, বর্তমানে ৯০ শতাংশ মানুষের জন্ম '৭৫ সালের পরে; তারা স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে খুব কমই জানে। এ গ্রন্থে ইতিহাস, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক দলিল হিসেবে দেখতে পাবেন। ছয় দফা প্রসঙ্গ, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার রচনায় অর্থনীতিবিদরা কীভাবে সহযোগিতা করেছেন, সে বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। ফলে এটি আজকের দিনে খুব প্রাসঙ্গিক।
ড. রওনক জাহান বলেন, অনেক ইতিহাস জাতি জানে না কিংবা জানতে দেওয়া হয়নি। সেসব বিষয় গ্রন্থটি থেকে জানা যাবে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের মতো বড় দল কেন কোনো কিছুই করল না- সে বিষয়গুলো রয়েছে এ গ্রন্থটিতে। ড. রেহমান সোবহান বইটিতে ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে ইতিহাসকে গল্পের মধ্য দিয়ে তুলে এনেছেন।
গ্রন্থের ওপর অন্যদের মধ্যে আলেচনা করেন জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমেদ, জায়েদ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হাবিবুল হক খন্দকার, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (আরইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা ও গ্রন্থটির প্রকাশক ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন।