প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
শুভ জন্মদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মাজহারুল ইসলাম রবিন
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২২ | ১৪:০১
এ ভূখণ্ডে উচ্চশিক্ষা প্রসারের পথপ্রদর্শক, একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনের বুদ্ধিবৃত্তিক সূতিকাগার, বাংলাদেশের গর্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ব্রিটিশ শাসনামলে পূর্ববঙ্গের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ১৯২১ সালের ১ জুলাই দেশের প্রাচীনতম এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিকদের বড় অংশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, পড়িয়েছেন। নানা বিরোধিতা-প্রতিকূলতা এড়িয়ে গড়ে ওঠা এ অঞ্চলের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল পূর্ববাংলার জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে, যা এ দেশের জ্ঞানচর্চার বাতিঘর হিসেবে শতবছর ধরে জ্বালিয়ে চলেছে জ্ঞানের মশাল।
আজ ১০২ বছরে পদার্পণ করছে দেশসেরা এই বিদ্যাপীঠ। দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রতিষ্ঠার এ দিনটি প্রতিবছর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস' হিসেবে উদযাপন করা হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে উচ্চশিক্ষার বিস্তার, মানসম্পন্ন গবেষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি এবং একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেছেন, ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কিত জ্ঞান ও বিজ্ঞানের নিবিড় চর্চা এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ নামের জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টিতে এ প্রতিষ্ঠানটির অনবদ্য অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এ প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই দেশের সমাজ উচ্চশিক্ষার পথে হেঁটেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলনের সূচনা ও বেগবান করেছে এবং দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চিন্তা ও সক্রিয়তার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সব জনআন্দোলন ও সংগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। এখনও সারাদেশের সুস্থ চিন্তার বিকাশ; অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের কেন্দ্র হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, তিনটি আবাসিক হল, ৬০ জন শিক্ষক এবং ৮৭৭ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ বিশ্ববিদ্যালয় এখন ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী এবং প্রায় ২ হাজার শিক্ষক নিয়ে এক বিশাল পরিবার।
শতবর্ষ আগের ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশের পরিত্যক্ত ভবনাদি এবং ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ডিগ্রি ক্লাসে অধ্যয়নরত ছাত্রদের নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে।
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত প্রদেশের একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা উজ্জীবিত হয়। নতুন উদ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড শুরু হয়। তৎকালীন পূর্ববাংলার ৫৫টি কলেজ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্রছাত্রীসহ অনেকে শহীদ হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচি :উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে শোভাযাত্রা, জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন, পায়রা ওড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে থিম সং পরিবেশিত হবে।
আজ সকাল ১০টার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ শোভাযাত্রা সহকারে শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের খেলার মাঠে সমবেত হবেন। সকাল ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে 'গবেষণা ও উদ্ভাবন :ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলাভবন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।