ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

প্রকল্পের ব্যয় কমানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকল্পের ব্যয় কমানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২২ | ০৪:০৮ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২২ | ০৭:১৪

প্রকল্পের ব্যয় কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য প্রকল্পগুলোর ক্যাটাগরি করা হয়েছে এ, বি, সি। 'এ' ক্যাটাগরির প্রকল্পের পুরো টাকা খরচ করা যাবে। 'বি' ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করা যাবে। আর 'সি' ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত থাকবে।

সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়য়ের সচিবরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো তুলে ধরেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুরুত্ব অনুযায়ী প্রকল্পগুলোকে এ, বি, সি ক্যাটাগরিতে ফেলবে। ধরেন একটা প্রকল্প নেওয়া হলো কিন্তু কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। এমন প্রকল্পগুলো সি ক্যাটাগরিতে যাবে। আর যে প্রকল্পগুলো ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে সেগুলো বাস্তবায়ন না করলে স্থগিত হয়ে যাবে। আবার ঠিকাদার বিল চাইবে। এজন্য ক্যাটাগরি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিজেই ঠিক করবে। এটি হবে গুরুত্ব অনুযায়ী।

তিনি বলেন, যদি সংশ্লিষ্ট কোনো মন্ত্রণালয় মনে করে কোনো একটি প্রকল্পের শ্রেণি পরিবর্তন করা দরকার, তাহলে তারা অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করবে। এছাড়া সব ধরনের কেনাকাটাতে যথাসম্ভব ব্যয় কমাতে হবে। কেনাকাটাতে যেগুলো তাৎক্ষণিক না কিনলে হবে না, সেই জাতীয় কেনাকাটা চলবে। যেগুলো আপাতত না কিনলেও চলবে, সেসব কেনাকাটা আপাতত স্থগিত থাকবে। যেমন গাড়ি কেনার কথা জোরালোভাবে মানা করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আর বৈদেশিক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়ের অধীন বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হলে তাতে যাওয়া যাবে। বৈদেশিক সাহায্যসংক্রান্ত বিষয়েও বিদেশে যাওয়ার সুযোগ আছে। অর্থাৎ প্রকিউরমেন্ট বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সরকারি টাকায় বিদেশ যাওয়া যাবে না।

বিষয়টি তিনি আরও পরিষ্কার করতে গিয়ে বলেন, যেমন, সরকারের টাকায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১০ জন স্টাডি ট্যুরে যাবেন, এটা বন্ধ হবে। ট্রেজারি থেকে বিল হয় এমন কোনো বিদেশভ্রমণ এখন মন্ত্রণালয়গুলো করতে পারবে না। সরকারি টাকায় সব ধরনের বিদেশভ্রমণ বন্ধ থাকবে। তবে দরপত্রে থাকা দরদাতার ব্যয়ে প্রযুক্তি স্থানান্তর সংক্রান্ত যে বিদেশ সফর রয়েছে সেগুলো বন্ধ থাকবে না বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে খুবই জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে কোথাও কোথাও যদি এক ফসলি জমি থাকে, সেখানে তিন ফসল করার বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। বাড়ির উঠানে শাকসবজি এগুলো করতে হবে। সবাইকে একটু সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অনুরোধ করেছেন। কারণ, এটা আমরা জানি না, কালকে-পরশু চুক্তি হলো, কালকেই আবার ইউক্রেনের ওদেসা বন্দরে বোমাবর্ষণ হয়েছে। চুক্তি হয়েছে ইউক্রেন থেকে খাবারটা বেরিয়ে আসবে। বন্দর ছাড়া আসবে কীভাবে? এটা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে না।

সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে খাবার ও সার নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আমাদের জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে হবে। বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে যেভাবে হোক আমরা যেন সাশ্রয়ী হই। অহেতুক এনার্জি ও টাকা-পয়সা খরচ না করি। আমি এরই মধ্যে আমার অফিস রুমে জানালার পর্দা তুলে দিয়েছি, ছোট লাইটগুলো বন্ধ রাখছি। সরকারি-বেসরকারি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। জ্বালানির ব্যবহার কমাতে মন্ত্রীদের গাড়ি নিয়ে বেশি ছোটাছুটি না করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈশ্বিক পরিস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখে আবার এই খরচ কমানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাস মহামারি ও সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশও ব্যয় সাশ্রয় করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানির সাশ্রয় ও রিজার্ভ রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। এরইমধ্যে সরকারি সব দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয় এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৮টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিবদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

×