ঢাবি ক্যাম্পাসে ৩৫ বছর বিনা ভাড়ায় ব্যবসা করছে 'ডাস'

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২৩:১৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যস্ত দোকান 'ডাস'। ভালো বেচাকেনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাড়া পরিশোধ ছাড়াই চলছে ৩৫ বছর ধরে। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। তবে ভাড়া আদায়ে কর্তৃপক্ষের নেই কোনো তোড়জোড়।
টিএসসির সড়কদ্বীপে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্ন্যাকস (ডাস) ১৯৮৭ সালে চালু হওয়ার পর থেকে ভাড়া পরিশোধ করেননি এর মালিক তকদির হোসেন মো. জসীম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তিনি। দোকান প্রতিষ্ঠার সময় ছিলেন ছাত্রদল নেতা। সূত্র জানায়, এই দীর্ঘ সময়ে কয়েক দফা এস্টেট ম্যানেজারের পরিবর্তন হলেও অদৃশ্য কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নেননি এবং দোকানটির ব্যাপারে কোনো প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেননি।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী উপাচার্যের আদেশে মো. জসীমকে ৪০০ বর্গফুট জায়গায় খাবারের দোকান স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। চুক্তিতে বলা হয়, দোকান চালু হওয়ার পর ভাড়া নির্ধারণ ও পরবর্তী সময়ে ভাড়া নবায়ন করা হবে। একই বছরে ডাসের রান্নাঘর নির্মাণের জন্য টিএসসির জনতা ব্যাংকের পাশে প্রায় ১ হাজার বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে ভাড়া না দেওয়া এবং পরিবেশদূষণের কারণে রান্নাঘরটি পরে ভেঙে ফেলা হয়।
ডাসের ভাড়া বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এস্টেটের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, প্রায় একই মানের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ সংলগ্ন দোকানের ভাড়া প্রতি মাসে ৫২ হাজার টাকা। ডাসের টাকা নিয়মিত পেলে বিশ্ববিদ্যালয় বছরে ৬ শতাংশের বেশি হারে লভ্যাংশ পেত। সবকিছু মিলিয়ে তাদের হিসাবে ভাড়ার পরিমাণ আড়াই কোটি টাকার কম নয়। ডাস বেশি জায়গা নিয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এটির ভাড়া আরও বেশি হওয়া যৌক্তিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী গাজী হিরক সমকালকে বলেন, সব সময়ই বহিরাগতরা এখানে এসে নাশতা করে। খাবারের দাম অনেক বেশি। ভাড়া আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে জানতে তকদির হোসেন মো. জসীমকে বিভিন্ন সময়ে ফোন করা হলে এবং খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি। তাঁকে দোকানে গিয়েও পাওয়া যায়নি। দোকানের ম্যানেজার মো. সোহেল দাবি করেন, দোকানটি সিটি করপোরেশনের অধীন এবং নিয়মিত ভাড়া দেওয়া হয়। এর বেশি কিছু তাঁর জানা নেই। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ সমকালকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন কোনো দোকান নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা সমকালকে বলেন, 'লিখিত দিন, তাহলে তথ্য দেব।' বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনা, দোকানপাট ব্যবস্থাপনায় সরাসরি যুক্ত থাকে এস্টেট অফিস। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন কাগজপত্রে অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সভায় ডাস নিয়ে কোনো তথ্য তাঁর কাছে আসেনি। তবে ক্যাম্পাস ক্রমে ছোট হয়ে আসছে। অবৈধ দোকান ও ফুটপাতের ভাসমান দোকানগুলো দখলকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। প্রক্টরিয়াল টিম নিজ উদ্যোগে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রাম্যমাণ দোকান পরিচালনা কমিটির সভাপতি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, টিএসসির ক্যাফেটেরিয়া ছাড়া আর কোনো খাবারের ব্যবস্থা নেই। ছেলেমেয়েরা হালকা নাশতা করবে- সেই ধারণা থেকে এটি গড়ে ওঠে। কিন্তু ডাসের কোনো কাগজপত্র নেই। তাঁরা চাচ্ছেন, এটিকে কর্তৃপক্ষের অধীনে আনা অথবা এসব দোকানে যেহেতু ঝামেলা হয়, তাই বন্ধ করে দেওয়া হোক। উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই। এস্টেট থেকে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।