ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা

কুশিয়ারার পানি বণ্টন চুক্তি খারাপ দৃষ্টান্ত

কুশিয়ারার পানি বণ্টন চুক্তি খারাপ দৃষ্টান্ত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২৩:২৯

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কুশিয়ারার পানি বণ্টন চুক্তি একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কারণ এখানে বাংলাদেশ অংশ থেকে পানি প্রত্যাহার করার জন্যও ভারতের অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

শনিবার 'সর্বজনকথা' নামের একটি সাময়িকী আয়োজিত অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ কথা বলেন। 'ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক :নদী, সীমান্ত ও বিদ্যুৎ' শীর্ষক এ আয়োজনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমেই দেশের সব যৌথ নদীর পানি বণ্টনসহ সার্বিক সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তাই বাংলাদেশের উচিত জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ আইনে সই করা।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভাটির দেশগুলোর নিরাপত্তার একটি সনদ বলা যায় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পানি আইনকে। এ আইনে বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই সই করতে হবে। ভারতও যেন সই করে সেজন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে। আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতসহ অন্য দেশগুলোর যৌথ নদীর সব সমস্যা যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করার দাবি জানান তিনি।

সীমান্ত হত্যার জন্য আন্তর্জাতিক তদন্ত ও জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া এবং ভারতের সঙ্গে এবার ট্রানজিট বিষয়ে কী চুক্তি হয়েছে তা স্পষ্ট করার দাবিও জানান আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, কী করে মাত্র ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার তাও বাংলাদেশের নদীর পানি বাংলাদেশই প্রত্যাহার করবে- এর জন্য ভারতের অনুমতি কেন নিতে হবে এটা একেবারেই বোধগম্য নয়। এটাকে কী করে সরকার সাফল্য হিসেবে দেখাতে পারে? তিনি বলেন, কুশিয়ারার ওপর ভারত বাঁধ ও বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প করেছে। সে জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে তারা কোনো ধরনের অনুমতি নেয়নি।

কুশিয়ারা চুক্তি ন্যায্য ও সঠিক হয়নি বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. খালেকুজ্জামান। তিনি বলেন, এ চুক্তিতে পুরো অববাহিকার পানি ও পলি কীভাবে ব্যবস্থাপনা হবে, তার উল্লেখ নেই। চুক্তিতে এমন কোনো বিধান নেই যার মাধ্যমে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্পের কারণে যে পরিবেশগত ক্ষতি করা হয়েছে তার জন্য তারা ভর্তুকি বা ক্ষতিপূরণ দেবে কিনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ১৫৩ কিউসেক পানি তোলার জন্য ভারতের কাছে অনুমতি চাওয়া প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশ দেনদরবার করতে পারত যে কুশিয়ারা নদীর ভারত অংশে তারা খাল বন্ধ করে দিয়েছে, বেশ কিছু সেচ ও বিদ্যুৎ প্রকল্প করেছে। এর অভিঘাত বাংলাদেশে পড়ছে। এসবের জন্য ভারত অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।

তার মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পানি ব্যবস্থাপনার জন্য এই চুক্তি একটা ভুল ও খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এর পর থেকে দেশের যে কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ পানি ব্যবস্থাপনা করতে গেলে ভারত বলতে পারে, বাংলাদেশের ভেতরে হলেও এর অভিঘাত ভারতেও পড়বে। কারণ, এটা যৌথ নদীর অংশ।

খালেকুজ্জামান বলেন, এখন ভারত যদি বলে, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ১৫৩ কিউসেক পানি নিতে পারবে, বাকি পানি ভারতের। এ চুক্তির অজুহাতে ভারত বাকি পানি নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করলে বাংলাদেশ কী করবে, সে বিষয়ে চুক্তিতে কিছু উল্লেখ আছে কিনা তা জানতে চান তিনি।

তিনি বলেন, উন্নয়নের জোয়ার বেশি বোঝানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৫৩ কিউসেক পানি দিয়ে ১০ হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের কথা বলেছে। আসলে এই পানি দিয়ে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টরের বেশি জমি চাষাবাদ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কুশিয়ারার পানি ব্যবহার করতে হলে তা সেচ দিয়ে উজানে নিতে হবে, যা যুক্তিসংগত নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজীম উদ্দিন খান বলেন, ২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সীমান্তে ১ হাজার ২৫৩ জন বাংলাদেশি হত্যার শিকার হয়েছেন। সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় তা অব্যাহত আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, ভারতের ওপর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিনির্ভরতা বৃদ্ধি উদ্বেগের। এতে ভারত নানাভাবে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ ও ভারতের উভয়ের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে ভারতের অংশগ্রহণ দাঁড়াবে প্রায় ১৬ শতাংশ।

আরও পড়ুন

×