ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরামের তথ্য

জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সহিংসতার শিকার ১৩৭৩ নারী

জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সহিংসতার শিকার ১৩৭৩ নারী

প্রতীকী ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২২ | ০৭:১৩ | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২ | ০৭:১৩

চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে দেশে এক হাজার ৩৭৩ জন নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে পারিবারিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৯৪ জন নারী। যৌতুকের জন্য নির্যাতন করা হয়েছে ১২৫ জন নারীকে। এ অবস্থায় নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে চার দফা দাবি জানিয়েছে ২৬টি এস ভাউ নেটওয়ার্কের সমন্বয় প্লাটফর্ম নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবিগুলো উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহন করা, প্রচলিত আইন সমূহের যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা করা, নারী ও শিশুদের নির্যাতনকারীদের আইন অনুসারে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং টেকসই উন্নয়ের ১৬ নং সূচক সকলের জন্য ন্যায় বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করা এবং সব স্তরে কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম সভাপতি মমতাজ আরা বেগম বলেন, সাম্প্রতিক কালে পত্রিকার পাতায় এবং সামাজিক মাধ্যম গুলোতে নারী ও শিশু সহিংসতার যে চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে তা খুবই অপ্রত্যাশিত এবং আশঙ্কাজনক বিষয়। প্রতিদিন আমরা লক্ষ্য করছি, নারী এবং শিশুরা পরিবারে, কর্মস্থলে, বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে সব যানবাহনে এবং পথে ঘাটে সর্বত্র সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। শুধু নির্যাতনই নয়, নির্যাতনের পর নারী এবং শিশুদের হত্যাও করা হচ্ছে। দুই মাসের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধারা ও এই সহিংসতার ঘটনা থেকে রেহায় পাচ্ছে না। একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলছে।

তিনি জানান, জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরামের অর্ন্তভুক্ত নেটওয়ার্ক সমূহে ১৯টি জেলায় এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক যে সব তথ্য এসেছে তার চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে গত আট মাসে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৫৪ নারী। জোরপূর্বক তালাক দেওয়া হয়েছে ৯০ জন নারীকে। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩০ জন। ৩৪ জন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ সময়ে ৪০টি বহু বিবাহের ঘটনা ঘটেছে। ৫২টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে। ১৩৮টি দাম্পত্য জীবন পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। দুইজনকে হত্যা করা হয়েছে। সহিংসতার শিকার তিন শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং অন্যান্য কারণে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২১১ জন নারী।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জরুরি সেবা ৯৯৯-এ নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা ব্যপক হারে বাড়ছে। এ বছরের জুলাই পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে ১১ হাজার ৯৫৯টি ফোন কল এসেছে। একই অভিযোগে গতবছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ১২ হাজার ১৬৯টি, ২০২০ সালে ৬ হাজার ৩৩১টি, ২০১৯ সালে ৩ হাজার ১১৫টি এবং ২০১৮ সালে ২ হাজার ২৯২টি ফোন কল আসে। এই তথ্যের প্রেক্ষিতে বলা যায় নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র খুবই আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, সদস্য কহিনুর বেগম, আছমা আক্তার মুক্তা, একশন এইড বাংলাদেশ এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার নূরুন নাহার বেগম, ফোরামের সমন্বয়কারী তুহিন সুলতানা প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ২৬টি ভাউ নেটওয়ার্কের সমন্বয় এই প্ল্যাটফর্মটি একশনএইড বাংলাদেশ এর আর্থিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের ২৫টি জেলার ২৬টি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৬ সাল থেকে কাজ করছে। বাংলাদেশে নারী নির্যাতন বন্ধে একটি সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম গঠিত হয়েছে।

আরও পড়ুন

×