ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ঢাবির অনলাইন সেবায় ভোগান্তি

ঢাবির অনলাইন সেবায় ভোগান্তি

যোবায়ের আহমদ

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৫:১১

মরিয়ম আক্তার (ছদ্মনাম) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের সাবেক শিক্ষার্থী। ২২ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়া থেকে তাঁর স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের মার্কশিট তোলার জন্য অনলাইনে আবেদনের চেষ্টা করেন। কিন্তু সঠিক তথ্য দিলেও তিনি আবেদন করতে ব্যর্থ হন। ওয়েবসাইটে তাঁর আবেদন ইনভ্যালিড (অবৈধ) দেখায়। এ সমস্যা নিয়ে তাঁর ভাই আশিকুল ইসলাম গত কয়েক দিন ধরে রেজিস্ট্রার ভবনে কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিস, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, আইসিটি সেল অফিসে ঘুরে অবশেষে গত মঙ্গলবার সমস্যার সমাধান পেয়েছেন।

গত অক্টোবরে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন সেবা চালু করে বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে করোনাকালে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন সেবা ও পেমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়। তবে অনলাইন সেবা নিতে গেলে পেমেন্ট ত্রুটি, যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। ফলে সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীকে পুনরায় রেজিস্ট্রার ভবনে ছুটতে হয়। যাঁরা বিদেশে অথবা দূরদূরান্তে থাকেন, তাঁরা পড়ছেন মহাবিড়ম্বনায়।

আশিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ওয়েবসাইটে আবেদন করতে গেলে ভর্তি সেশন ভুল দেখাচ্ছে। তবে সেখানে ভুল শোধরানোর কোনো নির্দেশনা দেওয়া নেই। ওয়েবসাইটে কয়েকটি নম্বর দেওয়া আছে। কিন্তু এগুলোতে কল যায় না। আবার কদাচিৎ কল গেলেও সমাধান দেওয়া হয় না। তাঁর বাসা মিরপুর ৬০ ফিট। কয়েক দিন ধরে রেজিস্ট্রার ভবন ঘুরে অবশেষে গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে অল্প সময়ে সমাধান পেয়েছেন।

গত কয়েক দিনে রেজিস্ট্রার ভবনে একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সমকালকে বলেন, অনলাইনে পেমেন্ট, স্বাস্থ্য বীমা, তথ্য ভুল, লগইন করাসহ নানা সমস্যায় তাঁরা রেজিস্ট্রার ভবনে এসেছেন। এ জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, আইসিটি সেল, কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে তাঁদের চক্রাকার ঘুরতে হয়।

কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, স্বাস্থ্য বীমার টাকা নির্ধারিত সময়ে না দিলে পরীক্ষার ফি দেওয়া যায় না। দিতে হলে রেজিস্ট্রার ভবনে গিয়ে সময় বাড়িয়ে নিতে হয়। ফলে দেখা যায়, দূরদূরান্ত থেকে পরীক্ষার সময় তাঁদের রেজিস্ট্রার ভবনে আসতে হয়। যদি কোনো হেল্পলাইন সুবিধা থাকত, তাহলে তাঁরা ফোন করে সমাধান নিতে পারতেন।

জানা যায়, বর্তমান বা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন সেবা চালু হলেও স্বতন্ত্র কোনো পেমেন্ট সিস্টেম করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পেমেন্ট সিস্টেমকে এখানে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই সেবা ওয়েবসাইটের একটি অংশ আইসিটি সেল, একটি অংশ কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিস, একটি অংশ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস ও একটি হিসার পরিচালক দপ্তর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে কোনো শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়লে বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন সেবায় ত্রুটি হতে পারে। এজন্য কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস সেন্টার অথবা কার্যকরী হেল্পলাইন থাকা উচিত। ছোট সমস্যার জন্য যেন শিক্ষার্থীদের পুনরায় রেজিস্ট্রার ভবনে না আসতে হয়। প্রাক্তন শিক্ষার্থী যাঁরা বিদেশে থাকেন, তাঁরা যাতে অনলাইনেই পরিপূর্ণ সেবা পান, সেই ব্যবস্থা করা উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তনে আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ অনলাইন সমস্যা নিরসনে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালুর কথা বলেছেন। সে রকম কোনো সেন্টার, ডেডিকেটেড হেল্পলাইন কিংবা ইন্টারনেট চ্যাট সুবিধা চালু করা যেতে পারে। তাহলে সেখানেই শিক্ষার্থীরা ফোন করে অথবা মেসেজ করে সমাধান নিতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফরের সময় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অল্প সময়ে অনলাইন সেবা চালু করা হয়। এতে চার অফিসের সমন্বয়ে কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। ভবিষ্যতে হেল্পলাইন সুবিধা চালু করা হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, অনলাইনে বিভিন্ন কারণে নানা অসুবিধা হতে পারে। আমরা ধীরে ধীরে সেগুলোর সমাধান করছি। হেল্পলাইনসহ অন্যান্য সুবিধা চালুর বিষয়টি মাথায় রয়েছে। কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সংশ্নিষ্ট বিভাগ ও আবাসিক হলে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

আরও পড়ুন

×