ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

উচ্ছ্বাস নেই প্রকাশকদের ব্যস্ততা নেই ছাপাখানায়

উচ্ছ্বাস নেই প্রকাশকদের ব্যস্ততা নেই ছাপাখানায়

ফাইল ছবি

লতিফুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৬:০৭

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বাংলা একাডেমি মেলা আয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে মেলার প্রাণ নতুন বইয়ের কারিগর ছাপাখানায় নেই কর্মব্যস্ততা। নতুন বই প্রকাশ নিয়ে উচ্ছ্বাস নেই প্রকাশকদের মাঝে। কাগজের দাম বাড়ার কারণে এ বছর অনেক প্রকাশকই নতুন বই আনছেন না। অনেকে মেলায় অংশ নেবেন না। বাংলাবাজারে ছাপাখানার শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। প্রকাশকদের দাবি, কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দাম বেশি রাখতে হচ্ছে।

গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার পুরান ঢাকার বাংলাবাজার রোড, প্যারিদাস লেন, শিরিষ দাস লেন, পাতলা খান লেন, রূপচান লেন, জয়চন্দ্র ঘোষ লেন ঘুরে এবং প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রেসগুলোতে নেই নতুন বই ছাপানোর চাপ। গড়পড়তা ধর্মীয় বই, গাইড বই, চাকরির বই, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের বই ছাপানোর কাজ চলছে। বাঁধাই কারখানাগুলোরও একই হাল। বইমেলা উপলক্ষে নতুন বই বাঁধাইয়ের তাগিদ নেই। প্রতিবছর মেলার দুই মাস আগে থেকেই ছাপাখানা ও বাঁধাইখানায় ব্যস্ততা থাকে অন্তহীন। ছুটির দিনেও চলে দিন-রাত এক করে কাজ। কিন্তু শুক্রবার বাংলাবাজারে অধিকাংশ ছাপাখানাই ছিল বন্ধ। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বইমেলায় নতুন প্রকাশনা কমবে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত।

সোলাইমান বুক বাইন্ডিং হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. সোলাইমান বলেন, এখনও কাজ আসা শুরু হয়নি। কাগজের দাম বাড়ায় প্রকাশকরা কাজ করাচ্ছেন না। অন্য বছর এ সময়টাতে অনেক কাজ থাকে। তিনি জানান, সব প্রকাশনীই মেলায় কম বই আনবে। সবাই ভয় পাচ্ছেন- বইয়ের দাম বাড়বে, যদি বিক্রি না হয়! মাহাবুব প্রিন্টার্সের ব্যবস্থাপক শামীম হাসান বলেন, কাজ এখনও নেই। আশা করছেন, মাসের শেষে কিছু কাজ আসবে।

এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে বাঁধাই কারখানাগুলো। কারখানা মালিকরা জানান, প্রেসে অন্য কাজ কম-বেশি থাকলেও বাঁধাই কারখানাগুলো বইমেলার ওপর নির্ভরশীল। জিয়নপুর বুক বাইন্ডিং ওয়ার্কসের স্বত্বাধিকারী ইউসুফ আলী জানান, বইমেলার জন্য তাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু প্রকাশনাগুলো কাজ দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কারখানাগুলো কর্মী ছাঁটাই করছে। তাঁর প্রতিষ্ঠানে আগে ২০ থেকে ৩০ জন কাজ করতেন। এখন কাজ করেন ১০ থেকে ১২ জন।

পুস্তক বাঁধাই ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহাবুব আলম মল্লিক বলেন, কাগজের দামের কারণে প্রকাশনাগুলো নতুন কাজ করছে না। তাই বাঁধাই কারখানায় কাজ নেই।

অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাযহারুল ইসলাম বলেন, কাগজের দাম এবার আড়াইগুণের বেশি বেড়েছে। তাই বইয়ের দামও ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পাঠকরা এত দামে বই কিনবেন কিনা তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। অনন্যার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক জানান, এ বছর তিনি আগের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ বই আনছেন। নতুন লেখকদের বই আসছে হাতেগোনা। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রকৃতির স্বত্বাধিকারী সৈকত হাবিব জানান, করোনা-পূর্ব সময়ের তুলনায় এবার ৮০ শতাংশ কম বই প্রকাশ করছেন তিনি। পেন্ডুলাম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রুম্মান তাশরীফ জানান, চাহিদা অনুযায়ী বই ছাপানোর জন্য তাঁরা ছাপাখানার সঙ্গে চুক্তি করেছেন।

২০১৫ সাল থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণ করলেও এ বছর মেলায় স্টল বরাদ্দের জন্য আবেদনই করেনি সমগ্র প্রকাশনী। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী শওকত আলী সমকালকে বলেন, প্রতি বছর মেলায় অংশগ্রহণ করলেও অগ্রদূত এবং গদ্যপদ্য প্রকাশনীর মতো অনেক প্রকাশনী মেলায় অংশ নিচ্ছে না। অতিরিক্ত খরচে বই ছাপিয়ে কার কাছে বিক্রি করবেন তাঁরা?

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রয় সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, সৃজনশীল বই সারাবছর বিক্রি হয় না। এ ধরনের বই মেলাকেন্দ্রিক। কিন্তু বইমেলা ঘিরে প্রকাশকদের মাঝে যে উদ্দীপনা থাকে, সেটি এ বছর নেই।

অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ডা. মুজাহেদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রীতি অনুযায়ী বাংলা একাডেমিতে ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩ উদ্বোধনে সম্মতি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

×