খন্দকার মোশাররফ এবার হারালেন সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ

সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ | ১০:৪৩ | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৫:৪৬
মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ পড়ার পর এবার সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদও হারালেন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ফরিদপুর-৩ আসনের এই সংসদ সদস্য দীর্ঘদিন ধরে সংসদের কার্যক্রমে অনুপস্থিত। তার অনুপস্থিতির কারণে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকও দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছিল না। সর্বশেষ গত বছরের ১৩ মার্চ কমিটির এই কমিটির বৈঠক হয়।
খন্দকার মোশাররফ গত বছরের ৬ এপ্রিল সর্বশেষ সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন। তার এই নিষ্ক্রিয়তায় সংসদীয় কমিটি যেমন অচল হয়ে পড়ে, তেমনি নির্বাচনী এলাকার কিছু উন্নয়নকাজেও স্থবিরতা দেখা দেয়।
গত বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে গেছেন বলে জানা যায়।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, খন্দকার মোশাররফ হোসেন সর্বশেষ সংসদের বৈঠকে যোগ দেন গত বছরের ৬ এপ্রিল। সেটা ছিল একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশন। এর পর বাজেট অধিবেশনসহ তিনটি অধিবেশন হয়েছে। তিনি কোনোটিতেই উপস্থিত ছিলেন না। রোববার পর্যন্ত তার অনুপস্থিতি ৪০ দিন। তিনি প্রায় দুই বছর ধরে রাজনীতির বাইরে।
সংসদের আইন শাখার সূত্র জানিয়েছে, খন্দকার মোশাররফ হোসেনের অনুপস্থিতি এখনও ৯০ কার্যদিবস পূর্ণ হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী, কোনো প্রকার কারণ দর্শানো ছাড়া টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত থাকলে তার আসন শূন্য হয়ে যায়।
সংসদীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ার বিষয়ে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানান। পরে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে টেলিফোন সংযোগ কেটে দেন।
প্রায় এক যুগ ফরিদপুর আওয়ামী লীগে 'রাজত্ব' করা ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এর আগে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ পড়ে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা সমকালকে জানিয়েছিলেন। গত আড়াই বছরে নির্বাচনী এলাকায় তাকে দেখা গেছে মাত্র দুবার।
আরও পড়ুন
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০০৯ সালে তিনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী হন। মন্ত্রী থাকাকালীন ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি এরপর স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য হন। তবে এবার মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়লেও তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা হয়।
সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের পর গঠিত কমিটিতে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যের পদ থেকেও খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বাদ দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ৭ জুন পর্যন্ত ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনিই ছিলেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তার নির্দেশেই পরিচালিত হতো ফরিদপুরের রাজনীতি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই সময় তিনি ছিলেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য। তার অনুগতরা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার উন্নয়নকাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও জমি দখল করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার বাড়িতে হামলার মামলায় ২০২০ সালের ৭ জুন রাতে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ফরিদপুর শহরের বদরপুরের বাড়িতে এবং শহরের অন্যান্য স্থানে পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় তার প্রভাব বলয়ের কেন্দ্রে থাকা দুই সহোদর ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ কয়েকজন নেতাকে। এর দু'দিন পর ৯ জুন খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকায় চলে আসেন।
ওই বছরের ১৪ জুলাই মেয়েকে নিয়ে এক দিনের জন্য ফরিদপুর গিয়েছিলেন। ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চাচির জানাজায় অংশ নিতে এক দিনের জন্য ফরিদপুর যান। এর পর তিনি আর ফরিদপুর যাননি। এরপর থেকেই মূলত স্থানীয় রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গত বছরের ৮ মার্চ অর্থপাচার মামলায় মোশাররফের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর কিছুদিন পর থেকে জাতীয় সংসদের কাজেও পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তার আপন ভাই ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, এপিএস এএইচএম ফোয়াদ, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেল বর্তমানে মানি লন্ডারিং মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে আছেন।
সংসদীয় কমিটি পুনর্গঠন
আজ রোববার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নতুন সভাপতি করা হয়েছে সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে।
সংসদের বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়। এই কমিটির আগের সভাপতি মতিয়া চৌধুরী সংসদ উপনেতা হওয়ায় ওই পদে নির্বাচিত করা হয়েছে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকে কয়েকটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। সংসদ নেতা শেখ হাসিনার পক্ষে চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরীর কমিটি পুনর্গঠনের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে পাস হয়।