গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মপন্থা জরুরি

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৫:৪২
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ৬৭ শতাংশ মৃত্যুর জন্য সরাসরি অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) দায়ী। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে এখনই জাতীয় কর্মপন্থা তৈরি জরুরি। এনসিডির কারণে অনেক মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। মানুষ দারিদ্র্যের চক্রে আটকে পড়ে আছে। অসংক্রামক রোগ শুধু ওষুধ ও চিকিৎসা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও জীবনাচরণে পরিবর্তন।
গতকাল সোমবার এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটস ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট এবং ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন আয়োজিত 'উচ্চ রক্তচাপ, সিডিডি এবং ডায়াবেটিস :আসন্ন পঞ্চম স্বাস্থ্য খাতের কর্মসূচির দিকে পদক্ষেপ' শীর্ষক জাতীয় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক
অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক
একে আজাদ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন
আহমেদ।
বক্তারা উচ্চ রক্তচাপ, সিভিডি এবং ডায়াবেটিসের বর্তমান পরিস্থিতির পাশাপাশি চলমান কর্মকাে র সাফল্য এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা হাসপাতালে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস সেবাকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন। এ ছাড়া শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাগুলোতে হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের সেবার মান উন্নত করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস ফোরামের (বিএনসিডিএফ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে গোলটেবিল বৈঠক শুরু করেন। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটস ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের সিইও ডা. শামীম হায়দার তালুকদার।
অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে মোট মৃত্যুর ৩০ শতাংশের জন্য কার্ডিওভাসকুলার রোগ দায়ী। শহর ও গ্রাম- উভয় অঞ্চলেই ডায়াবেটিসের উচ্চ প্রকোপ রয়েছে। তিনি বলেন, অসংক্রামক রোগ থেকে বাঁচতে সবার আগে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। ধূমপান নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন আইন করা হলেও তা বন্ধ হয়নি। আইনের প্রয়োগ জরুরি।
অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো- রোগীদের কোনো জাতীয় নিবন্ধন নেই। রোগের আসল ধরন সম্পর্কে কোনো ডাটা নেই। এটি অনেক বড় সমস্যা। তবে সম্প্রতি এনসিডিসি থেকে স্ট্রোকের নিবন্ধন শুরু করা হয়েছে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম এ মালেক বলেন, আমরা এখন গ্লোবাল ভিলেজে বাস করছি। বিশ্বে টিকে থাকতে হলে সুস্থ থাকতে হবে। সুস্থ থাকতে অবশ্যই প্রতিরোধে (প্রিভেনশন) গুরুত্ব দিতে হবে। বারবার প্রতিরোধের কথা বলতে হবে। সবাইকে মিলে কাজ করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিসের প্রকোপ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা
হচ্ছে। এটি ঠেকাতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, 'সুস্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা নেই বললেই চলে। চিকিৎসকরা বলেন,
রোগীরা তাদের কথা শুনতে চায় না, তাদের পরামর্শ মেনে চলে না। এ ক্ষেত্রে আমি বলব যে, রোগীদের যে কৌশলে পরামর্শ দিলে মানবে, সেটি আপনাদের চেষ্টা করতে হবে।'