ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সারাহর কিডনিতে নতুন জীবনের স্বপ্ন দুই নারীর

সারাহর কিডনিতে নতুন জীবনের স্বপ্ন দুই নারীর

রোগীর চোখে কর্নিয়া স্থাপনের পর ডাক্তারদের সেলফি - সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৫:০১ | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৫:০১

অকালমৃত্যুকে আলিঙ্গন করা সারাহ ইসলামের কিডনি পেয়ে মধ্যবয়সী দুই নারী শামীমা আক্তার ও হাসিনা আক্তার যেন নতুন জীবন পেলেন। কিডনি প্রতিস্থাপনের পর হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা চলছে তাঁদের। বর্তমানে অবস্থা উন্নতির দিকে।

এদিকে সারাহর কর্নিয়া নেওয়া দুই নর-নারীর কোনো ধরনের জটিলতা না থাকায় শনিবার দুপুরে চিকিৎসকরা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়েছেন তাঁদের। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপন করলে একটু দেরিতে কাজ শুরু করে। এজন্য হাসিনা ও শামীমাকে আরও মাসখানেক হাসপাতালেই থাকতে হবে। দৈনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। করতে হবে ডায়ালাইসিসও।

দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন শামীমা ও হাসিনা। চিকিৎসক পরামর্শ দেন কিডনি প্রতিস্থাপনের। ডোনার না পাওয়ায় বাঁচার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন এ দু'জন।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কিডনি আইসিইউ ইউনিটে চিকিৎসাধীন শামীমা। শনিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তিনি খুবই ধীরে ধীরে কথা বলছেন। সমকালকে বললেন, সারাহর দেওয়া কিডনিতে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি। এটা অবশ্যই ভালো লাগার। তবে এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হইনি। এখনও নানা জটিলতা রয়েছে। ডায়ালাইসিস করা লাগছে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে। অনেক ওষুধ লাগছে। এগুলো কিনতে অনেক টাকা প্রয়োজন।

তিনি দেশবাসীর কাছে সারাহর জন্য দোয়া চান। বললেন, 'আমি নিজেও কিডনি দাতার জন্য দোয়া করেছি।' শামীমার স্বামী মিনু মিয়া বলেন, স্ত্রীর কিডনির চিকিৎসা করাতে ৩৫ লাখের বেশি টাকা চলে গেছে। পাঁচ বছর আগে প্রস্রাবে ইনফেকশন দেখা দেয় শামীমার। পরীক্ষায় দুটি কিডনি কষ্ট পাওয়া যায়। পরে ছয় মাস ডায়ালাইসিস করে ভারতের চেন্নাইয়ে নেওয়া হয় তাঁকে। পরিবারের কারও সঙ্গে কিডনির মিল না থাকায় মেডিসিনের মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব কিনা সেজন্য নেওয়া হয়েছিল। তবে সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, রোগীর যে অবস্থা, তাতে কিডনি প্রতিস্থাপনের বিকল্প নেই। পরে তাঁকে দেশে আনা হয়। এর পর থেকে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিয়ে আসছিলেন শামীমা।

কিডনি নেওয়া হাসিনা মিরপুরে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের অধ্যাপক এ কে এম খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে ৩৭ বছর বয়সী এ নারীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। তিনি সমকালকে বলেন, হাসিনা ভালো আছেন। তাঁর চিকিৎসা চলছে। তিনি আইসিইউতে রয়েছেন। শনিবার সকালে ডায়ালাইসিস করানো হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে কিডনি কার্যকর না হওয়ার পর্যন্ত ডায়ালাইসিস চলমান থাকবে।

অধ্যাপক খুরশিদুল বলেন, 'মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপনের পর বেশকিছু জটিলতা থাকে। ইনজেকশন দিয়ে সেগুলো ধীরে ধীরে করতে হয়। আমরাও একই পথে এগোচ্ছি। রোগীর অবস্থা উন্নতি হলেও কত দিন হাসপাতালে থাকতে হবে, এখনই তা বলা যাচ্ছে না।'

হাসিনা নোয়াখালীর বাসিন্দা। দুই কিডনি অকেজো হওয়ায় পাঁচ বছর ধরে ডায়ালাইসিস করে আসছিলেন। কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হলে তাঁর স্বজন অনেক খুঁজেও ডোনার পাননি।

বিএসএমএমইউয়ের রেনাল ট্রান্সপল্গান্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, প্রতিস্থাপন হওয়ার চার রোগীই ভালো আছেন।

তিনি জানান, বিএসএমএমইউতে কিডনি প্রতিস্থাপন হওয়ায় শামীমার অবস্থা দ্রুত ভালোর দিকে যাচ্ছে। কারণ সারাহ শরীর থেকে কিডনি বের করে দ্রুত তাঁর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তাঁর শরীরে স্থাপন করা কিডনির কার্যকারিতা ভালো ছিল।

কর্নিয়াগ্রহীতা ফেরদৌস আক্তার পাবনার একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক। ভাইয়ের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সম্প্রতি ঢাকায় এসেছেন তিনি। এ অবস্থায় বিএসএমএমইউর চিকিৎসক ফোন করে জানান কর্নিয়া পাওয়ার কথা। তিনি ডান চোখে কিছুই দেখতে পেতেন না। এখন দুই চোখেই দেখতে পারবেন বলে আশাবাদী।

অন্যদিকে রাজধানীর সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়েছে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মোহাম্মদ সুজনের। তিন বছর ধরে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমছিল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সুজনের। তিনি বলেন, শনিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ পর আবার ফলোআপ করাতে হবে।

দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত ২০ বছর বয়সী সারাহকে গত বুধবার রাতে ব্রেন ডেড ঘোষণার পরপরই তাঁর শরীর থেকে কিডনি ও কর্নিয়া সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপন করা হয়। ২০১৮ সালের মরণোত্তর অঙ্গ সংযোজন আইনে কিডনি, লিভার, কর্নিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গদানে বৈধতা দেওয়া হলেও এত দিন কর্নিয়া ছাড়া আর কিছুই প্রতিস্থাপনের ইতিহাস ছিল না। তবে সেই বাধা কাটে সারাহর মাধ্যমে।

আরও পড়ুন

×