ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

আবরার হত্যা: প্রযুক্তিগত তদন্তে ফেঁসে যাচ্ছে অমিত সাহা

আবরার হত্যা: প্রযুক্তিগত তদন্তে ফেঁসে যাচ্ছে অমিত সাহা

অমিত সাহা -ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ | ১০:০১

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও ফেঁসে যাচ্ছে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহা। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রযুক্তিগত তদন্তে সে ওই হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হচ্ছে। 

আবরারকে পেটানোর সময়ে অমিত সাহা 'এসবিএইচএসএল-১৫+১৬' মেসেঞ্জার গ্রুপে যোগ দেয়। ওই সময়ে সে আবরারকে পিটিয়ে 'আরও' তথ্য নেওয়ার কথা জানায়। তা ছাড়া ঘটনার সময়ে মামলায় সরাসরি জড়িতদের সঙ্গে সে একাধিকবার কথাও বলে। তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে শুক্রবার রিমান্ড শেষে মাজেদুল ইসলাম নামে এক আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট ডিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, গত ১০ অক্টোবর অমিত সাহাকে গ্রেফতারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে সে বারবারই বলার চেষ্টা করেছে ঘটনার সময়ে সে শেরে বাংলা হলে উপস্থিত ছিল না। গোয়েন্দাদের কাছে সেই তথ্যও রয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তিগত তদন্তে মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মেসেঞ্জার যাচাইয়ে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা মিলেছে। এজন্যই তাকে নতুন করে দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে অমিত সাহার নাম ছিল না। কিন্তু ঘটনার রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হল ছাত্রলীগের ১৫ ও ১৬ ব্যাচের নেতাকর্মীদের 'এসবিএইচএসএল-১৫+১৬' নামের গ্রুপ মেসেঞ্জারের কথোপকথন ফাঁস হয়ে যায়। এরপরই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬ ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহার বিষয়টি আলোচনায় আসে। শেষ পর্যন্ত রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে ডিবি তাকে গ্রেফতার করে। পরে ছাত্রলীগও তাকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে।

গ্রেফতার বিভিন্ন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত তদন্তে পাওয়া তথ্যে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, নিজেদের গ্রুপ মেসেঞ্জারে অমিত সাহা তথ্য পায় আবরারকে শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নেওয়া হয়েছে। তখন সে ফোনে ও মেসেঞ্জারে সেখানে উপস্থিত অন্য নেতাকর্মীদের তাকে পেটানোর নির্দেশ দেয়। এক পর্যায়ে তাকে জানানো হয়, আবরার বমি করছে। ও ভান করছে জানিয়ে অমিত সাহা তাকে আরও পিটিয়ে তথ্য নিতে বলে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, চার্জশিটে অমিত সাহার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হবে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, 'দুষ্কর্মে সহায়তা করা হয়েছে, সহায়তার দরুন সে কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকলে এবং সেক্ষেত্রে দণ্ডদানের কোনো স্পষ্ট বিধান না থাকলে অনুরূপ সহায়তার সাজা।'

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, আবরার হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন আসামি এজাহারের বাইরে। তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬ আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

ওই কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার হওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আবরার হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য মিলেছে। রিমান্ড শেষে শুক্রবার মাজেদুল ইসলাম নামে এক আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে শিবির সন্দেহে তার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ যাচাই করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এক পর্যায়ে তাকে মারধর করা হয়। রাত ৮টা থেকে আনুমানিক দেড়টা পর্যন্ত আবরারকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প ও রশি দিয়ে দফায় দফায় পেটানো হয়। এক পর্যায়ে সে মারা যায়। ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন।

আরও পড়ুন

×