ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বসন্ত বাতাসে সই গো...

বসন্ত বাতাসে সই গো...

পহেলা ফাল্কগ্দুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। জোড়া উৎসব। আজ প্রিয়জনের হাতে ফুল তুলে দেওয়ার দিন। তাই নগর-শহর-গ্রামে ফুলের বাড়তি চাহিদা। সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামের চাষিদেরও সোমবার কেটেছে ব্যস্ত সময় -মাহবুব হোসেন নবীন

সাজিদা ইসলাম পারুল

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ২০:৩৮

বসন্ত বাতাসে সই গো, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের এই গানের মতোই বাতাসের ভেলায় ভেসে ফুলের গন্ধ আর প্রেমের মৌতাত নিয়ে আবারও বাঙালির দুয়ারে উপস্থিত বসন্ত। যদিও শীতের জড়তা কাটিয়ে অনেক আগেই প্রকৃতিতে নিজের আগমন ধ্বনি জানান দিয়েছিল ঋতুরাজ। গাছে গাছে নতুন কচিপাতা, ফুলের সমারোহ, কোকিলের কুহুতান আর মন উদাস করা বাউরি বাতাস বসন্তের ওই আগমন ধ্বনিকে এরই মধ্যে পোক্ত করেছে মানুষের মনে। জীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে নতুন করে জেগে ওঠার সেই শক্তি নিয়েই আজ মঙ্গলবার তারুণ্য উদযাপন করবে বসন্তের প্রথম মাস ফাল্গুনের প্রথম দিনটি। একই সঙ্গে আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হওয়ায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য দিনটি হতে যাচ্ছে বিশেষ কিছু। ফাল্গুনের হলুদাভ রঙে রঙিন হয়ে তাঁরা একে অপরকে বলবেন মনের ব্যাকুলতার পরম ভাষাটি।

সব জায়গায় প্রকৃতিতে ফাল্গুনের রূপটি সতেজ-শ্যামল হলেও ইট-কাঠের এই রাজধানী শহরে তার রূপ ভিন্ন। পহেলা ফাল্গুন একেবারে বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হলেও ভালোবাসা দিবসের আবেদনটি একেবারেই ভিন্ন। পশ্চিমা ধ্যানধারণা থেকে ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডের উদ্ভব হলেও এ দেশের তারুণ্য দিনটিকে নিজেদের মতো আত্তীকরণ করেছে। এ দিনে আগুনলাগা রঙে কিশোর থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সীর মধ্যেই ছড়িয়ে যাওয়া ভালোবাসার উত্তাপ দেখা যাবে লাল-হলুদ পোশাকে। তরুণীদের খোঁপায় থাকে লাল গোলাপ বা হলুদ গাঁদা ফুল। কোনো কোনো তরুণী সৌন্দর্যের ভিন্নতা আনতে খোঁপায় গুঁজে নেন গ্লাডিওলাস, টিউলিপ কিংবা গাজরা। ছেলেরা পথে বের হন লাল-হলুদ বা গেরুয়া পাঞ্জাবিতে। মনের মানুষকে তাঁরা উপহার দেন লাল গোলাপ। সব মিলে তরুণ-তরুণীর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে দিনটি হয়ে ওঠে ভিন্ন এক উদযাপনের উপলক্ষ।

পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এরই মধ্যে রাজধানীর ফুলের দোকানগুলোয় বেচাকেনা চলছে। শাহবাগ, আগারগাঁওসহ ফুলের মার্কেট বলে পরিচিত জায়গাগুলোয় গত কয়েকদিন থেকেই বিক্রেতারা এই দিনটি নিয়ে তুমুল ব্যস্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার করোনার বিধিনিষেধ না থাকায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছেন। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এবার ফুলের বিক্রিও ভালো। ফুল ছাড়াও এ দিনটি উপলক্ষে চকলেট, শুভেচ্ছা কার্ডসহ নানা উপহার ও শোপিসের ব্যবসা জমজমাট।

রাজধানীতে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস মানেই অমর একুশে বইমেলায় তারুণ্যের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এরই মধ্যে এই দিনের ভিড় ভালোভাবে সামলাতে বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া বইয়ের প্রকাশক, বিক্রেতা, লেখকরাও প্রস্তুত তাঁদের প্রকাশিত নতুন বইটি যাতে ক্রেতার হাতে সহজে পৌঁছে, তার জন্য।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা প্রাঙ্গণ ছাড়াও আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, শিল্পকলা একাডেমি, রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, বেইলি রোডের ফাস্টফুডের দোকান, ধানমন্ডি লেক, রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় তরুণ-তরুণীর ভিড় জমবে। এ উপলক্ষে অনেক সংগঠন এসব স্থানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাবির চারুকলা অনুষদে আয়োজন করা হয়েছে বসন্ত উৎসব। গত ২৮ বছর ধরে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ এর আয়োজন করে আসছে। এ দিন সকাল ৭টায় রাগাশ্রয়ী সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হবে। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, 'প্রকৃতির সুরে-রঙে আমরা আমাদের এক করে নিতে পহেলা ফাল্কগ্দুনে একত্র হই। বসন্ত উৎসব তারুণ্যের উৎসব। সব তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর আসুন, সবাই মিলে বসন্তকে বরণ করি।'

আরও পড়ুন

×