একুশে বইমেলা
মুক্তিযুদ্ধের নতুন গল্পের খোঁজে তরুণরা

লতিফুল ইসলাম
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০৭:০৯
স্টলে স্টলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই খুঁজছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া শম্পা। অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণের মাঝামাঝিতে এক স্টলের কর্মীকে বললেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণাধর্মী কী কী বই আছে? এরপর নিজে থেকেই একটি বই হাতে তুলে নিলেন। শম্পা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার আকাঙ্ক্ষা ছোটবেলা থেকে। আগে দাদির কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছেন। এরপর পড়েছেন বেশ কিছু বই। এবার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিস্তর জানতে গবেষণাধর্মী বই খুঁজছেন। তবে মেলায় একই বিষয়ে অনেক বই। তাই ঘুরে ঘুরে বুঝেশুনে বই কিনতে হচ্ছে।
পাশের স্টলের সামনে কথা হয় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে। মেলায় প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধের নতুন বই কেনা হয়। মেলায় একই বিষয়ে অনেক বই। তাই বুঝেশুনে নতুন কিছু জানা যায় এমন বইয়ের খোঁজ করছেন তিনি।
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে স্বপ্নের বুনন, তা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ নেয় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে। তবে এ বিজয় শুধু সুখের নয়, স্বজন হারানোর বেদনারও। এসব নিয়ে নানা ধরনের বই লিখেছেন অনেকে। বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে প্রতিবছর অনেক বই প্রকাশ হয়। তবে প্রকাশকরা বলছেন, পাঠকদের চাওয়া মুক্তিযুদ্ধের নতুন নতুন গল্প।
এবার বইমেলার ২৩তম দিন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ৬৮টি বই এসেছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পত্রিকার সংকলন, নানান উপাত্ত, গবেষণা, গল্প ও উপন্যাসও আছে। গতকাল মেলায় এসেছিলেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। জার্নিম্যান বুকসের প্যাভিলিয়নে বসে কয়েকজন লেখক ও সাংবাদিকের সঙ্গে তিনি আড্ডা দিচ্ছিলেন। এই প্রকাশনী থেকে এ বছর তাঁর তিনটি বই এসেছে। এর মধ্যে দুটি মুক্তিযুদ্ধের গবেষণার বই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক লেখালেখি আর নতুন বইয়ের মধ্যে গবেষণায় কোনো ঘাটতি আছে কিনা এমন প্রশ্নে মুনতাসীর মামুন বলেন, গবেষণায় ঘাটতি সবসময় থেকে যায়। অনেকে গবেষণা করছেন, তারপরও ৫০ বছর পরে হয়তো নতুন কোনো তথ্য বের হবে। যেগুলো আমরা দেখিনি, বা আমরা অনেক কিছু লিখতে পারছি না। নতুন প্রজন্ম যখন লিখবে তখন আরও নতুন তথ্য বের হবে। তবে যারা একাডেমিশিয়ান আছেন তাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ কম। আবার অনেকে গবেষণা করলেও বৈচিত্র্য নেই। গবেষণা ও লেখা চুরি হয়। এভাবে বইয়ের চর্চা হয় না। আমাদের গবেষণার বইয়ের হুবহু কপি করেও অনেকে লিখছেন।
বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধের বই খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায়, এ বছর মেলায় জার্নিম্যান বুকস থেকে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের সম্পাদনা ও সংকলনের বই 'অন্নদাশঙ্কর রায়ের মুক্তিযুদ্ধ' ও 'সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মুক্তিযুদ্ধ', অনন্যা প্রকাশনী থেকে 'মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ : গণহত্যা, শিলিগুড়ি থেকে সিমলা', সময় প্রকাশনী থেকে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের 'ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ কথা', সুভাষ সিংহ রায়ের 'বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ও বাকশাল', কথাপ্রকাশ এনেছে আফসান চৌধুরীর 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ধারাবাহিকতার ইতিহাস', ঐতিহ্য এনেছে সালাম আজাদের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণসংগ্রহ 'মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও অন্যান্য', আতাউর রহমানের 'অবরুদ্ধ নয় মাস', আতহার উদ্দীন তালুকদারের 'কীর্তনখোলায় নৌযুদ্ধ', পাঠক সমাবেশ এনেছে মোস্তফা সেলিমের সম্পাদনায় মুক্তিযুদ্ধকালীন পত্রিকার সংকলন 'সাপ্তাহিক জন্মভূমি', নাজমুল আমীনের 'গাজীপুরে একাত্তর, আলোচিত বীরগাথা', সেলিনা হোসেনের 'সাগর' এনেছে গ্রন্থকুটির, সুজন বড়ুয়ার 'যুদ্ধ জয়ের কিশোর গল্প' ইত্যাদি।
গতকাল বইমেলার ২৩তম দিনে নতুন বই আসে ৭৮টি। বিকেলে মূলমঞ্চে ছিল জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক কথাসাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র এবং জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণা ও মুক্তগদ্য চর্চা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মিল্টন বিশ্বাস ও ফরিদ কবির। আলোচনায় অংশ নেন রফিকুর রশীদ, সুভাষ সিংহ রায়, সরিফা সালোয়া ডিনা ও মাসুদ পথিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোলাম কুদ্দুছ।
ববি হাজ্জাজের বই 'প্রেসিডেন্টের লুঙ্গি নাই' নিষিদ্ধ
গতিধারা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ববি হাজ্জাজের বই 'প্রেসিডেন্টের লুঙ্গি নাই' অমর একুশে বইমেলায় নিষিদ্ধ করেছে বাংলা একাডেমির টাস্কফোর্স কমিটি। বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববি এক সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের উপদেষ্টা ছিলেন।
টাস্কফোর্সের সভাপতি অসীম কুমার দে বলেন, 'বইটির নাম আপত্তিকর। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির পদবিকে কটাক্ষ করে বইটির শিরোনাম করা হয়েছে। বইমেলার নীতিমালায় বলা আছে, কাউকে কটাক্ষ করে বই প্রকাশ করা যাবে না। গত সোমবার বইটি নজরে আসলে পর দিনই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে তা মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।' গতিধারার নির্বাহী পরিচালক আহমেদ কাওসার জানান, নিষেধ করার পর আমরা আর বইটি বিক্রি করছি না।